দান ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দানের অনেক ফজিলত আছে। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব ফজিলতের কথা তুলে ধরেছেন। যারা গোপনে দান করেন, কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের আরশের নিচে ছায়া ও শান্তি দান করবেন। দান-সাদকা গুনাহকে এমনভাবে মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। দান জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। আরও অনেক ফজিলত আছে দানের। হাদিসের বর্ণনায় ওঠে
এসেছে সেসব ফজিলত-
১. সাদকাহ গুনাহ মিটিয়ে দেয়। এটি গুনাহের কাফফারা। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একদিন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ফেতনা সম্পর্কিত হাদিস মনে রেখেছো? হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সেভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি (আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে) বড় দুঃসাহসী ছিলে, (বল তো) তিনি কিভাবে বলেছেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদিসটি হলো)- মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশি নিয়ে ফেতনায় পতিত হবে আর নামাজ, সাদকা ও নেক কাজ সেই ফেতনা মুছে দেবে।… (বুখারি ১৪৩৫)
২. ধন-সম্পদের বরকত
আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
‘এরপর যে ব্যক্তি দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে, তবে আমি তাকে শান্তির উপকরণ প্রদান করবো। আর যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া হয়েছে আর ভাল কথাকে অবিশ্বাস করেছে, ফলত আমি তাকে ক্লেশদায়ক বস্তুর জন্য আসবাব প্রদান করবো।’ (সুরা আল-লাইল : আয়াত ৫-৯)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (মুসলিম ১০১০, বুখারি ১৪৪২)
সুতরাং নবিজির ভাষায় দানকারীর জন্য এভাবে দোয়া করা-
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقَ مَالٍ خَلَفًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আত্বি মুনফিকা মালিন খালাফা’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তার দানে উত্তম প্রতিদান দিন।’
৩. ভয়ংকর মৃত্যু থেকে হেফাজত
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান-খায়রাত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি ৬৬৪)
৪. আল্লাহর আরশের ছায়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না সে দিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। …
‘যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না।’ … (বুখারি ১৪২৩)
৫. জান্নাতের বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে নামাজ আদায়কারী, তাকে নামাজের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জেহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে রোজা পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী, তাকে সাদাকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার বাবা-মা কোরবান হোক, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’, আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে। মুসলিম ১০২৭, বুখারি ১৮৯৭, আহমাদ ৭৬৩৭)
Discussion about this post