ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের রসগাঁওয়া গ্রাম থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে ধান ও বাজরা ক্ষেতের মাঝে অবস্থিত স্কুলের একটি দোতলা ছাত্রাবাস।
স্কুলটি বেআইনিভাবে চালানো হচ্ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই বিদ্যালয়ের হোস্টেলে আবাসিক ছাত্র ছিলেন কৃতার্থ কুশওয়াহার। শিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। অনুমান করা হচ্ছে, ২২-২৩ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রাতে তার এই রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে এই ঘটনাকে ‘বলি’ বলেই মনে করছে। পুলিশ যশোধন বাঘেলের তান্ত্রিক হওয়া এবং ‘বলির’ সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে, যা অভিযুক্তদের রিমান্ড প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হাথরসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার সিং বিবিসিকে বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আরো কিছু তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।’
নিহত ছাত্রের বাবা কৃষ্ণা কুশওয়াহা বলেন, ‘আমার ছেলেকে হোস্টেলের মধ্যে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। ওর ঘাড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ঠোঁট নীল হয়ে গিয়েছিল। আমি দোষীদের ফাঁসি চাই, বিচার চাই।’
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘২৩ তারিখ বিকেল ৫টায় আমাকে স্কুল থেকে ফোন করা হয়েছিল। তারা জানান, আমার ছেলে খুব অসুস্থ। আমি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু তারা রাজি হননি। আমিও বের হয়ে যাই কিন্তু কখনো এক জায়গায় আবার কখনো অন্য জায়গায় আসতে বলছিলেন তারা। আমাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছিল। দেড় ঘণ্টা পর দীনেশের কাছে আমার ছেলের নিথর দেহ দেখতে পাই আমি। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দিই আমরা।’
ছাত্রের মা কমলেশ কুশওয়াহা মানসিকভাবে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলের স্কুলের পোশাক দেখাতে গিয়ে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন তিনি।
বাবা কৃষ্ণা কুশওয়াহা জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তিনি জানতে পারেন, ছেলেকে বলি দেওয়া হয়েছে। শোকার্ত এই পিতার প্রশ্ন, ‘আমি একজন বাবা, আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আমার ছেলের কী হয়েছিল সেটা জানাটা আমার অধিকার। কেন তাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো?’ কুশওয়াহা বারবার বলছেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে কিভাবে কেউ বলি দিতে পারে? আমার সন্তানের হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, পুরো সত্যিটা বেরিয়ে আসা উচিত।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ছাত্রাবাস ঘিরে এটাই প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগেও সেখানকার ছাত্রদের সঙ্গে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএল পাবলিক স্কুলটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের পড়ানোর অনুমতি থাকলেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছিল বলেও অভিযোগ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্কুলে ছাত্রাবাস চালানোর জন্যও অনুমতি ছিল না।
ছাত্রের মৃত্যুর পর হাথরাসের শিক্ষা বিভাগ ওই স্কুলের স্বীকৃতি বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
সূত্র : বিবিসি, আনন্দবাজার
Discussion about this post