বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন জিয়াউর রহমান বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন পালিয়ে যেতে। বেগম খালেদা জিয়া তখন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু, ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বেগম খালেদা জিয়াকে সেখান থেকে খুঁজে বের করেন এবং গ্রেফতার করেন। তাই বলা যায়, বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা।
সোমবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউনহল মাঠে আয়োজিত আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বরকত উল্লাহ বুলু আরো বলেন, আজ ১৫ বছর পর কুমিল্লার সদর উপজেলার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১৭ বছর ধরে এই এলাকার নেতাকর্মীরা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এমন কোন নেতা নাই যে কিনা মামলা খায়নি। কিন্তু, এখন অনেকে বলছে জুলাই-আন্দোলন ৩৬ দিনের ফল। আমি বলবো, এটা ভুল। কারণ, মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়নি। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিল।
এসময় তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী বা এনসিপির কেউ যদি কোনো জায়গা থেকে চাঁদা নিয়ে আসে তাহলে সেটাকে ডোনেশন বলা হচ্ছে। আবার কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা দখল করে সেটাকে পুনরুদ্ধার বলা হচ্ছে। আর বিএনপি যদি ১০ টাকাও নেয় সেটা হয়ে যায় চাঁদা এবং এভাবে বিএনপিকে ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন মিডিয়াও কাজ করছে। এসব মিডিয়া দিয়ে কোন লাভ হবে না।
এসময়, জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম করলে নাকি আপনি বেহেশতে চলে যাবেন তাদের নেতারা এসব বলে থাকে। যারা এসব বলে থাকে তারা কখনো মুসলমান হতে পারে না। কারণ বেহেশতে কে যাবে এটা একমাত্র আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করে থাকেন। তারা তাদের আমীরকে আল্লাহ’র ওলীও উল্লেখ করে থাকে।
সর্বশেষ তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো উন্নয়ন হবে না, দেশে কোনো ঋণ দেওয়া হবে না। নির্বাচিত সরকার আসলে, তারেক রহমান সরকার গঠন করলেই কেবল বাংলাদেশের ঋণগুলো শোধ করা যাবে। কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী পিআর এর জন্য মাঠে নেমেছে, যে পিআরের কোনো অস্তিত্বই কোথাও নাই। এখন অনেকে সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলে, ইতিহাস পাল্টে দেবার কথা বলে। তাই আমি জোরালোভাবে বলতে চাই, কেউ যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টাতে চায় সেটা তারা পারবে না।
এসময় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। সম্মেলন উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউছুফ মোল্লা টিপু এবং কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রহমান রাজিব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম। এছাড়া সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সফিউল আলম রায়হান।
এসময়, আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল কালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান আমীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সভা শেষে জেলা বিএনপির প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট মোঃ আলী আক্কাছ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ও বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন রেজাউল কাইউম, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শফিউল আলম রায়হান।
এর আগে সকালে বেলুন উড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অতিথিরা৷এসময়, আদর্শ সদর উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে প্রায় দশ সহস্রাধিক নেতাকর্মীরা সম্মেলনে অংশ নেয়।
Discussion about this post