বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের অবদান ও নেতৃত্বের স্বীকৃতিতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন
শারজাহস্থ ইওয়ান হোটেল হলরুমে বাংলাদেশি প্রবাসী প্রকৌশলীদের অংশগ্রহণে মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হলো ৭৭তম ইঞ্জিনিয়ার্স ডে। এন.আর.বি ইঞ্জিনিয়ার্জ এন্ড আরকিটেক্টস্, ইউএই’র আয়োজনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র একটি দিবস উদযাপন ছিল না, বরং প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের সম্মিলিত শক্তি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জাতীয় উন্নয়নে তাদের অবদানের প্রতি সম্মান জানানোর এক অনন্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহর থেকে আগত প্রায় দুই শতাধিক প্রকৌশলী ও পেশাজীবীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই অনুষ্ঠানটি। বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং সফলতার গল্প উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি, প্রজন্মের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের কীভাবে বিশ্ব দরবারে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এন.আর.বি ইঞ্জিনিয়ার্জ এন্ড আরকিটেক্টস্, ইউএই’র সভাপতি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইউএই-এর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, তাঁর বক্তব্যে তিনি প্রকৌশলীদের প্রতি পেশাগত নৈতিকতা ও অঙ্গীকার বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং বলেন, “প্রকৌশলীদের হাতেই গড়ে ওঠে একটি দেশের উন্নয়নের ভিত। প্রবাসে থেকেও আমরা যদি পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করি, তবে দেশের জন্যও সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পদ হয়ে উঠবে।”
সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম, যিনি হুদাইবিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচিত, তাঁর বক্তব্যে বলেন, “প্রকৌশল শুধু চাকরি নয়, এটি একটি দায়িত্ব। প্রবাসে আমরা যেমন সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি দেশের জন্যও আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।”
তিনি প্রবাসী প্রকৌশলীদের বাংলাদেশে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন, যাতে করে ‘Reverse Brain Drain’-এর মাধ্যমে দেশ লাভবান হতে পারে।
অনুষ্ঠানে এন.আর.বি ইঞ্জিনিয়ার্জ এন্ড আরকিটেক্টস্, ইউএই’র কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়: সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এম. মঈনুল ইসলাম (বর্তমান দুবাই চ্যাপ্টারের সভাপতি)।
এন.আর.বি ইঞ্জিনিয়ার্জ এন্ড আরকিটেক্টস্ আবুধাবীর নতুন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম নিজাম ও সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এর দায়িত্বে আছেন ইঞ্জিনিয়ার ইমরান ।
এছাড়াও, আমিরাতের প্রতিটি স্টেটের কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রতিটি স্টেট কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেই কাজ করবেন। আলাদা সেক্রেটারিয়েটের দায়িত্ব পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী প্রকৌশলীদের কল্যাণে সরকারের নিকট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপস্থাপন করা হয়। ইউএইতে কর্মরত প্রকৌশলীদের জন্য ‘প্রফেশনাল ভিসা’ সুবিধা চালুর মাধ্যমে তাঁদের পেশাগত মর্যাদা ও সুযোগ বৃদ্ধি করার আহ্বান জানানো হয়। দীর্ঘদিন প্রবাসে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনকারী প্রকৌশলীদের ‘Reverse Brain Drain’-এর আওতায় বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত করার প্রস্তাবও উঠে আসে। পাশাপাশি, এসব পেশাজীবীদের জন্য সরকার-সমর্থিত স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা চালুর দাবি জানানো হয়।
Institution of Engineers, Bangladesh (IEB)-এর প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে, যেসব শহরে কমপক্ষে ২৫ জন সদস্য রয়েছেন, সেখানে প্রবাসী চ্যাপ্টার অনুমোদন দেওয়া হোক। একই সঙ্গে, IEB-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবাসী প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত একাধিক পদ সৃষ্টির দাবি জানানো হয়, যাতে তাঁদের মতামত ও অভিজ্ঞতা সংগঠনের মূল নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্টেট ও চ্যাপ্টারের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট প্রকৌশলীরা তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ড. মতিউর রহমান, একে এম নিজাম ,আবুল হোসেন মুকুল, ড. মিফতাহুল খোদাম, মাসুদ পারভেজ (সেক্রেটারি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফুজাইরাহ ও প্রেসিডেন্ট, NRB ইঞ্জিনিয়ার ফুজাইরাহ), মোঃ আকিকুর রহমান, তাবিবুর রহমান, তানভীর আহমেদ, আব্দুল মাতিন, আমজাদ হোসেন, হাবিবুর রহমান কবির, মোহাম্মদ আলী, বিকো রায়, আমিনুল ইসলাম লাভলু আরও অনেকে। তাঁরা বলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তে কর্মরত NRB প্রকৌশলীরা নিজেদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
Discussion about this post