নিজেকে থানার ওসি পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় দিনাজপুর কোতয়ালী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী আপেলকে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে তাদের কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই ঘটনায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাককে ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুরপাড় এলাকায় তাকে গণপিটুনি দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
আটক ও বহিষ্কার হওয়া ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক সদর উপজেলার নহনা গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে ও আপেল একই এলাকার শাহাদতের ছেলে।
চাঁদাবাজি, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভাটিনা ঠাকুরবাড়ী এলাকার মৃত নির্ভয় বর্মনের ছেলে চৈতু বর্মন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— নহনা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহীনুর ইসলাম, আপনের ছেলে শান্ত, সাহাদুলের ছেলে আক্তারুল, উজ্জ্বল রায়, তাপস রায় ও মহেশ চন্দ্র রায়।
মামলা, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৈতু বর্মণের ছেলে ইমন চন্দ্র বর্মণের (২২) সাথে একই গ্রামের মিতু রানী রায়ের (১৯) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিল। তাদের বিয়েকে কেন্দ্র করে গত ৭ জানুয়ারি আব্দুর রাজ্জাকসহ তার সঙ্গীয় লোকজন মাইক্রোবাস নিয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে দিনাজপুর সদরের ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামে শ্রী চৈতু চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে যান। নিজেকে কোতয়ালী থানার ওসি পরিচয় দিয়ে চৈতু বর্মণকে অভিযোগ রয়েছে বলে থানায় যেতে বলেন। এ সময় পরিবার ও স্থানীয়দের কারও সাথে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলেন। মাইক্রোবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে করে তার ছেলের ঠিকানা নেয়। পরে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাকে টাঙ্গাইলে অপহরণ করে নিয়ে যান।
টাঙ্গাইল থেকে ছেলে ইমনসহ তার বাবা বাদী চৈতুকে নিয়ে ৮ জানুয়ারি রাত ১০টায় পুনরায় দিনাজপুর নিয়ে এসে ৪নং শেখপুড়া ইউনিয়নের মাধবপুর গোয়ালপাড়া এলাকায় মহেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে নিজের ও ছেলের জীবন বাচাতে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে স্বীকার করে এক দিনের সময় চাইলে রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সাথে মামলাসহ প্রাণনাশের হুমকিও প্রদর্শন করে।
পরের দিন বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও লোকজন চৈতু ও তার ছেলেকে ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুর পাড়ে ডেকে নেয়। এ সময় ওই চাঁদার টাকা দাবি করে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ সময় এলাকার লোকজনের সন্দেহ হলে তারা এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদের আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
এ ব্যাপারে কথা হলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ও আপেলকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাককে সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিস্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় সংসদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর জেলা শাখার অধিনস্থ সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাককে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিস্কার করা হলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সাথে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
Discussion about this post