সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
বুধবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে জাকির খানের অনুসারী সোহেল রানা মিল্কী লেখেন, আজকে নারায়ণগঞ্জের সিংহ পুরুষ, তরুণ প্রজন্মের অহংকার, ৯০ সালের সুপারস্টার নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা জাকির খান ভাইয়ের সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার তিন ভাই দেখা করলাম।
ছবিগুলোতে দেখা যায়, জাকির তার অনুসারীদের সঙ্গে কোনো বাধা ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছেন এবং এক নেতার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, যদি সাব্বির হত্যার বিচার না হয় তাহলে এই দেশে সাধারণ মানুষ আর বিচার চাইবে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাইবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, জাকিরকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে নয়, তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকার কারাগার কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত বলতে পারবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকে তিন মাসে তাকে কারাগারে পাইনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমরা একাধিকবার তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠির উত্তরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও দুটি চিঠি পাঠিয়েছে। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাকিরের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সমস্যা রয়েছে। সে জন্য তার চিকিৎসা সম্পন্ন হতে আরো সময় প্রয়োজন।’
হাসপাতালে অনুগামীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে। হয়তো সেখানে অনুগামীদের সঙ্গে দেখা হতে পারে। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নেব।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জাকিরের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। তবে কারাগারে থাকা একজন আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে কারা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণেই থাকতে হবে। এর ফলে কোনো আসামির সঙ্গে কেউ দেখা করতে চাইলে তাকে কারাগার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাদে আসামির সঙ্গে কারো দেখা করা অসম্ভব বিষয়।’
২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জাকিরকে গ্রেপ্তার করার পর র্যাব জানায়, এর আগে জাকির খান দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকিরের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারেও ছিলেন তিনি। কিন্তু কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি আবার দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন।
তারা আরো জানায়, তিনি নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এর পর থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তারও আগে ১৯৯৪ সালে জাকিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। উচ্চ আদালতে সেই সাজা কমে আট বছর হলেও গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশে-বিদেশে প্রায় ২১ বছর পলাতক ছিলেন। ২০০৩ সালে সাব্বির হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন। পরে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৫-৯৬ সালে জাকির জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। নাসিম ওসমানের লোকজনের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে জাকির বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৪ সালে বিএনপি র্যাব গঠন করলে জাকির দেশ ছেড়ে পালান।
Discussion about this post