মাঈনুল হোসাইন টিপু:::
পৃথিবীর ইতিহাসে বিক্ষোভের মুখে কোন রাষ্ট্রপ্রধানের এভাবে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নজির খুব কমই আছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে শুধুমাত্র তার লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে অরক্ষিত ও বিপদের মুখে ঠেলে জাননি; ধ্বংস করে গেছেন ৭৫ বছরের পুরোনো একটি দলকে, দলের লিগ্যাসিকে।
মাত্র দুদিন আগেও যে দলের শক্তিশালী অবস্থান ছিলো, বেশ শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো ; তাদের বড়াই করা সাংগঠনিক কাঠামো, তৃণমূল মাত্র একদিনে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে। সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে, কেউ ন্যুনতম রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারেনাই। কারণ তাদের ফাইট করার মতো ন্যুনতম নৈতিক ভিত্তি, মনোবল কোনটাই আর নাই।
গতকাল ডয়েচেভেলেকে দেয়া স্বাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা পুত্র জয় বলেছেন, তারা ৪ আগস্ট থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। তারা জানতেন পদত্যাগ করবেন, কিন্তু এরপরও সারা বাংলাদেশে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। শুধু মাত্র ৪ আগস্ট সরকারি হিসেবে মারা গেছে ১০৪ জন মানুষ। শেখ হাসিনা জানতেন তার সময় শেষ, কিন্তু শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের চেষ্টা করে গেছেন। তিনি শুধু তার নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলেননি, বিপদে ফেলেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত পুলিশের সাধারণ সদস্যদের। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আছে ঠিক আছে, কিন্তু পুলিশের সাধারণ সদস্যরা যদি জানতেন শেখ হাসিনা এভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিবে তাহলে তারা কোনভাবেই উপরের কমান্ড মানতেন না। জনতার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতেন না। আর এত প্রাণহানিও ঘটতো না।
শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করে গ্রেফতার হতেন তাহলেও অন্তত তার দলের উপর এমন কালিমা লাগতো না। তার দলের নেতাকর্মীরা এটা নিয়ে ফাইট করতে পারতেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারতেন। কিন্তু তার দম্ভ, অহংকার, স্বেরাচারী মনোভাব তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপার হলো, জাতির উদ্দেশ্যে কিংবা তার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ন্যূনতম যে কিছু বলবেন সেই সুযোগটুকুও তিনি হারিয়েছেন।
শেখ হাসিনার গন্তব্য কোথায় হবে জানিনা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার এলাই দেশগুলো তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু ইন্ডিয়াও তাকে খুব বেশিদিন গ্রহণ করবে বলে মনে হয়না। আর শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে ইন্ডিয়াও যে খুব বেশি মেজর স্টেপ নিবে সেই সম্ভাবনাও কম৷ কারণ তাদের নিজেদের স্বার্থে, ব্যবসা-বাণিজ্য টিকেয়ে রাখার জন্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেভেন সিস্টার্স এর অখন্ডতা টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের নেক্সট গভমেন্টের সাথে তাদের কাজ করতে হবে। সেই সাথে সামলাতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তীব্র ভারত বিরোধিতা।
শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে শুধু নিজের সর্বনাশ করেছেন তাই নয়, তার পিতার অর্জনও ম্লান করে গেছেন। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ এই সত্যটা সবাইকে মনে রাখতে হবে৷রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নিতে হবে এই করুণ পরিনতি থেকে।
Discussion about this post