৪১ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দেওয়া বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী এবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখালেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাদের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে আশিকের তথ্য হালনাগাদ করেছে।
গিনেস রেকর্ডস বলছে, ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রি-ফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’ শাখায় রেকর্ডটি ছিল ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানার। সে রেকর্ড এখন বাংলাদেশের আশিকের।
সোমবার (১ জুলাই) আশিক চৌধুরী নিজেই গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের তথ্য পেয়েই অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিলাম, দুটি গিনেস রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছি। আজ গিনেস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে ই-মেইল করেছে। রেকর্ডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
গিনেস রেকর্ড গড়তে গিয়ে ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানার রেকর্ড ভেঙেছেন আশিক। পতাকা হাতে দীর্ঘ পতনে ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানার রেকর্ড ছিল ১১ হাজার ২৫৬ মিটার বা ৩৬ হাজার ৯২৯ ফুট ১৩ ইঞ্চি। আশিক চৌধুরী সেটা ভেঙেছেন ১১ হাজার ৩৬৮ মিটার বা ৩৭ হাজার ২৯৬ ফুট ৫৮ ইঞ্চি পর্যন্ত পতাকা হাতে রেখে।
আশিক জানান, ‘লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রি-ফল’ নামে গিনেসের আরেকটি রেকর্ডে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। এ রেকর্ডটি এখন ভারতের জিতিনের দখলে। এ রেকর্ড গড়তে গত বছরের ১ জুলাই জিতিন যান যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি সময় নিয়েছিলেন ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। আশিক আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে আপডেট তথ্য পাবেন তিনি।
গিনেস রেকর্ড গড়তে ২১ মে রাতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিলেন আশিক চৌধুরী। এরপর এয়ারফিল্ডে দুই দিন অনুশীলন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পূর্বনির্ধারিত সময় গত ২৫ মে রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালান তিনি। উড়ন্ত এই তরুণ মাটিতে নেমে আসার আগে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা মেলে ধরে আকাশে ভাসতে থাকেন। ৪ হাজার ফুটের কাছাকাছি আসার পর প্যারাস্যুটের সাহায্যে মাটিতে নেমে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় বিমান থেকে লাফ দিলেও তারও এক ঘণ্টা আগে আকাশে উড়েছিলেন আশিক। আশিক চৌধুরী এই উদ্যোগের নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য হাইয়েস্ট এভার স্কাইডাইভ উইথ আ ফ্ল্যাগ’। তার এই প্রচেষ্টায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি।
সাধারণত স্কাই ডাইভাররা মাটি থেকে ১২ হাজার বা ১৩ হাজার ফুট উঁচু থেকেই আকাশে লাফ দেন। ১৫ হাজার ফুট ওপরে গেলে নিতে হয় বাড়তি অক্সিজেন। যেহেতু স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার শুরু হয় ৩৬ হাজার ফিট থেকে। কাজেই এর ওপরে গেলে সেখানে বাতাস থাকবে না। আশিক লাফ দিয়েছেন ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে, মানে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ছাড়িয়ে আরও পাঁচ হাজার ফুট ওপর থেকে। এই উচ্চতায় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৫ ডিগ্রি। তাই ফুল থার্মাল বডিকিট পরেই তাকে নামতে হয়েছে আকাশে, যা অনেকটা স্পেসস্যুটের মতো।
আশিক জানান, ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে নিয়ে বিমানটি ৪১ হাজার ফিট উচ্চতায় উঠে যায়। এই উচ্চতা থেকে তিনি যখন মেঘের রাজ্যে লাফ দেন, তখন পৃথিবী যে গোলাকার, সেটা খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছিলেন। হাতে পতাকা নিয়ে ক্রমাগত মেঘ ভেদ করে মেমফিসের আকাশে আশিক উড়ছিলেন পাখির মতো। মাটি থেকে প্রায় চার হাজার ফুট কাছাকাছি দূরত্বে এসে পিঠের প্যারাস্যুট খুলে দেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে নিরাপদে নেমে আসেন মাটিতে। সেই সঙ্গে শেষ করেন স্বপ্ন ও সাধনার স্কাই ডাইভিং মিশন। মেমফিসের আকাশে আশিকের স্কাই ডাইভিংয়ের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য লারজেস্ট ফ্ল্যাগ ফ্লোন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
আশিক ২০১৪ সালে ভর্তি হন একটি প্রাইভেট পাইলট প্রশিক্ষণ স্কুলে। এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে এক দিন ককপিটে বসেন আশিক। লন্ডন থেকে উড়োজাহাজ নিয়ে ছুটে যান পাশের এক শহরে। পাইলট হলেও স্কাই ডাইভিংয়ের নেশা তার থেকে যায়। ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন আশিক। যোগ দেন বহুজাতিক হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন-এইচএসবিসি ব্যাংকে। ঢাকায় চার বছর দায়িত্ব পালন করে গত বছরের শুরুতে চলে যান সিঙ্গাপুরে।
আশিক জানতে পারলেন, থাইল্যান্ডে স্কাই ডাইভিংয়ের দারুণ সুযোগ আছে। সিঙ্গাপুর থেকে থাইল্যান্ডে যাতায়াতও সহজ। যোগাযোগ করলেন থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানি নামের এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। লিখিত পরীক্ষাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে গত বছর হাজির হয়েছিলেন অনুশীলনে। এক দশকের বেশি সময় পর, অবশেষে স্কাই ডাইভিংয়ে রেকর্ড
Discussion about this post