দুবাইয়ের উন্নয়ন ও আধুনিকতার প্রতীক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের জীবনগাথা যেন এক প্রেরণার ইতিহাস। রাজপরিবারে জন্ম নেওয়া এই নেতা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব বিশ্বের নেতৃত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে আছেন।
শৈশব ও শিক্ষা
১৯৪৯ সালে শেখ মোহাম্মদের জন্ম। অল্প বয়সেই ইসলামি শিক্ষা ও আরবি সাহিত্যে গভীর অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৫ সালে দিরা এলাকার আল আহমদিয়া স্কুলে ভর্তি হন। কৈশোরে যুক্তরাজ্যে গিয়ে ভাষা ও সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ক্যামব্রিজে ইংরেজি শিক্ষা শেষে ব্রিটেনের এক মিলিটারি ক্যাডেট স্কুলে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
(ছবি: তরুণ শেখ মোহাম্মদ ব্রিটেনে সামরিক পোশাকে, হাতে ক্যাপ ধরে আছেন।)
প্রশাসনিক জীবনের সূচনা
১৯৬৮ সালে দুবাই পুলিশ ও জননিরাপত্তা প্রধান হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) গঠিত হলে তিনি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিযুক্ত হন—যা তাঁর রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।
(ছবি: শেখ মোহাম্মদ পুলিশ ইউনিফর্মে দুবাইয়ের প্রথম দিকের প্রশাসনিক বৈঠকে।)
ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নতুন অধ্যায়
১৯৯৫ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ মোহাম্মদ দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর হাত ধরেই দুবাইয়ে প্রশাসনিক সংস্কার, অর্থনৈতিক খোলামেলা নীতি এবং বিশ্বমানের অবকাঠামো উন্নয়নের সূচনা হয়।
(ছবি: শেখ মোহাম্মদকে নতুন ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে শপথ নিতে দেখা যাচ্ছে।)
রুলার অব দুবাই
২০০৬ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মাকতুম বিন রাশিদের মৃত্যু হলে শেখ মোহাম্মদ দুবাইয়ের রুলার নিযুক্ত হন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি দুবাইকে এক বিশ্বনগরীতে রূপান্তরিত করেছেন—যেখানে ব্যবসা, প্রযুক্তি, পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মিলেমিশে এক আধুনিক সভ্যতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
(ছবি: শেখ মোহাম্মদ রুলার হিসেবে প্রথম অফিসে প্রবেশ করছেন।)
উন্নয়ন ও নেতৃত্বের মাইলফলক
দুবাই শপিং ফেস্টিভ্যাল (১৯৯৬): তাঁর উদ্যোগেই শুরু হয়, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
বুর্জ খলিফা উদ্বোধন (২০১০): বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন উদ্বোধন করে তিনি দুবাইকে বৈশ্বিক মানচিত্রে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
দুবাই স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও ভিশন ২০২১ প্রকল্প: প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন ও নাগরিক সেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন।
মার্স মিশন (২০২১): সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহাকাশ অভিযান “Hope Probe” তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিরই ফল।
(ছবি: শেখ মোহাম্মদ বুর্জ খলিফার উদ্বোধনে, দুবাই এক্সপো সাইটে এবং মহাকাশ মিশনের সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করছেন।)
সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও কাব্যচর্চা
শেখ মোহাম্মদ একজন দক্ষ অশ্বারোহী ও ঘোড়দৌড় প্রেমী। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গডলফিন স্টেবলস বিশ্বখ্যাত ঘোড়দৌড় কেন্দ্র। পাশাপাশি তিনি “ফাজ্জা” ছদ্মনামে কবিতা লেখেন, যেখানে মানবতা, নেতৃত্ব ও আরব ঐতিহ্যের প্রতিফলন দেখা যায়।
(ছবি: শেখ মোহাম্মদ ঘোড়দৌড় মাঠে ও কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে।)
এক দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতীক
শেখ মোহাম্মদের নেতৃত্বে দুবাই আজ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ও উদ্ভাবনী শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর দৃষ্টি সর্বদা ভবিষ্যত-মুখী: তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা।
“আমরা অপেক্ষা করি না ভবিষ্যতের জন্য, আমরা ভবিষ্যত সৃষ্টি করি”—এটাই তাঁর নেতৃত্বের দর্শন।

























