শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে তিনি এ প্রতিবাদ জানান। পরে এ নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করতেই সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি এর আগে একাধিকবার মৌখিকভাবে আবেদন করলেও এবার মাঠে নেমে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এনিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকে তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অনেকে এ নিয়ে দলীয় শৃংখলার পরিপন্থী বলে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব ঘোষিত সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন তাতে তার নাম ছিল না। এ নিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে হেরে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ নতুন করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ধানক্ষেতে গিয়ে আম্পায়ারের ভঙ্গিতে ‘রিভিউ’ এর জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি। ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের সেই মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে আলাল উদ্দিন লেখেছেন, ‘নো ক্যাপশন।’জানতে চাইলে আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘দল প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা দলের সিদ্ধান্তই মানি। তবে দলের হাইকম্যান্ডের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আমাদের তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশ ছিল, মিষ্টি বিতরণসহ আনন্দ-উল্লাস করা যাবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বৃহস্পতিবার হাইওয়ে ব্লক করে আনন্দ-উল্লাস করেছেন এমপি সাহেব নিজে উপস্থিত থেকে, অথচ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি।’
এদিকে ফেনী-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি ঢাকা থেকে গাড়িবহরসহ ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়ে এসে বক্তব্যে বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেয়ায় ৯৯ ভাগ লোক খুশি হলেও ১% চোর-ডাকাত নাখোশ হয়েছে। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।’ফেনী জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন, করোনা মহামারী ও ২০২৪ সালের বন্যায় পাশে না থাকা একজন মানুষ নাকি ফেনীবাসীর সেবা করবে! ১৭ বছরের আন্দোলনে একদিনও জেল না খাটা ব্যক্তি এখন জেল-জুলুমের শিকার কর্মীদের চোর-ডাকাত বলছে।
বিএনপির এক নির্যাতিত নেতা লিখেন, দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। কিন্তু দল যেন এমন কাজ না করে, যার খেসারত শেষ পর্যন্ত আমাদেরই দিতে হয়।
এ রিভিউ আবেদনে ভিন্নমত পোষণ করে শহিদুল আলম নামে একজন ফেসবুকে লিখেন, ফেনী-২ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনবারের নির্বাচিত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে একজন সিনিয়র নেতা ভিপি জয়নালকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ ক্লেস থেকে রক্ষা করেছেন। অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে একজন অপরজনকে মেনে নিত না, ফেনীতে ভয়াবহ গন্ডগোল হতো। তাই এই সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক হয়েছে। অল্প কিছু নেতাকর্মী এর বিরুদ্ধে থাকলেও বেশিরভাগই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এর বিশাল শোডাউনে তার প্রমাণ।
ওই ফেসবুক পোস্টে শেখ ফরিদ ভূঁইয়া নামে আরেকজন লেছেন, ‘আপনার ছবিটাই ক্যাপশন৷’ সাফিম রহমান নামে অন্য আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘ছবি যখন কথা বলে তখন ক্যাপশনের দরকার পড়ে না।’ এদিকে ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদকে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বলে মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা।
যদিও দিনব্যাপী এই রিভিউ আবেদনের ছবি নিয়ে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনার পর রাতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আলালের রামপুরের বাসভবনে যান বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবদিন। কিন্তু সাক্ষাত মিলেনি আলালের। মোবাইল ফোনে কল দিলেও সাড়া দেননি তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী জেলার ৩টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। আসনগুলো হচ্ছে- ফেনী-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ফেনী-২ আসনে লড়বেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, ফেনী-৩ আসনে লড়বেন খ্যাতনামা শিল্পপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।




























