বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিশেষ করে দেশটির ঝাঁ চকচকে শহর দুবাই ক্রমান্বয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের চাহিদা পূরণের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। বড় আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও দ্রুত অগ্রগামী অর্থনীতির এই দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন আরব আমিরাতে বসবাসরত বহু অভিবাসী। ভারত, চীন, মিশর, পাকিস্তান, ইরানের নাগরিকদের পাশাপাশি এই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা করছেন। আবার তাদের এসব প্রতিষ্ঠানে আরো প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
চট্টগ্রামের আনিস উদ্দিন তাদেরই একজন। বড় ভাইয়ের হাত ধরে পনের বছর আগে পাড়ি জমান আরব আমিরাত। আনিসসহ বর্তমানে তার আরও ছয় ভাই দেশটিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানে আমিরাতের শারজাহ প্রদেশে তাদের ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শ্রমিকের পাশাপাশি কাজ করছেন পাকিস্তানি ও আফগানিরা।
আজমান প্রবাসী মুরশেদ আলম চাকরি ছেড়ে গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ৮০ হাজার দিরহাম বিনিয়োগে শুরু করেন পোশাকের ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ থেকে এখন তার প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা আসেন।
আনিস ও মুরশেদের মতো অনেকেই জীবিকার সন্ধানে দেশটিতে গিয়ে কয়েক বছরের পর পেশা পরিবর্তন করেছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগের মাধ্যমে নাম তুলেছেন ব্যবসায়ীর খাতায়। এরা নিজেদের ব্যবসায়িক সাফল্য আনার পাশপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানে দেশীয় শ্রমিকের চাহিদা থাকায় নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কামরুল হাসান বলেন, ‘অনেকে শুরুতে চাকরি করতে দেশটিতে এলেও পরে নিজেদেরকে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করছেন। ছোট রেস্তোরাঁ, পর্যটন প্রতিষ্ঠান, পোশাকের দোকানের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ ঋণ গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ প্রবাসী সফল হচ্ছেন এখানে। এসব ব্যবসা যখন বৃহৎ আকার ধারণ করবে, তখন নিজেদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।’
দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, ‘আমিরাতে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজারের মতো। যারা প্রবাসে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’
মো. আবু জাফর বলেন, ‘দেখা গেছে- কেউ কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানে কাজ শিখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। শুধু ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়; ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা আরও অন্তত লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। ক্রমান্বয়ে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি নিয়োগ করেছেন তারা। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
সমকাল, ২৬ সেপ্টেম্বর ২৩।
Discussion about this post