লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা নূর ইসলাম (৪১)। দীর্ঘদিন ভুগছিলেন কিডনির সমস্যায়। একপর্যায়ে ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল। এখানে-সেখানে খোঁজ করে যখন কিডনি মিলছিল না, তখন এগিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী রুমা বেগম (৩১)। তাঁর দেওয়া কিডনিতে সুস্থ হয়ে উঠছেন নূর ইসলাম।
এই দম্পতি বর্তমানে ঢাকার শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুড়িমারী ইউনিয়নের মুগলিবাড়ি গ্রামের নূর ইসলাম ও রুমা বেগম দম্পতির দুই সন্তান। বড় ছেলে রিফাত হোসেন (১১) স্থানীয় বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সিফাত হোসেন (৫)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুগলিবাড়ি গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে নূর হোসেনের সঙ্গে প্রায় ১৪ বছর আগে একই ইউনিয়নের উফারমারা (মাছির বাজার) গ্রামের সহিদার রহমানের মেয়ে রুমা বেগমের বিয়ে হয়। প্রায় ৪ বছর আগে নূরের কিডনি রোগ ধরা পড়ে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চিকিৎসা নেন। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন ও ছয় মাস ডায়ালাইসিস করেছেন। এরপরও সুস্থ হননি নূর ইসলাম।
পাঁচ মাস ধরে আবারও নূর হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দেখানো হয়। সেখানে চিকিৎসক বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষার ফলাফল দেখে চিকিৎসক জানান, তাঁর দুটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির প্রয়োজন।
চিকিৎকের পরামর্শে তাঁরা বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। পরীক্ষায় নূর হোসেনের সঙ্গে স্ত্রী রুমা বেগমের কিডনি মিলে যায়। এ অবস্থায় স্বামীকে বাঁচাতে গৃহবধূ রুমা বেগম নিজের একটি কিডনি দেন। গত রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করা হয়।
মুঠোফোনে গৃহবধু রুমা বেগম বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব আর মরলে দুজনে মরব। আমার স্বামী কখনো বলেনি তোমার কিডনি আমাকে দাও।’
রুমা বেগমের মা আমিনা বেগম বলেন, ‘বিপদে রুমার মতো প্রত্যেক মেয়েকে তাঁর স্বামীর পাশে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য নুর ইসলাম বলেন, এটি একটি বিরল উদারণ। স্ত্রীর কিডনি দিয়ে স্বামীর প্রাণ বাঁচানোর ঘটনায় এলাকায় অনেকে ওই গৃহবধূর প্রশংসা করছেন। তিনি দ্রুত তাঁদের দুজনের সুস্থতা কামনা করেন।
প্রথম আলো
Discussion about this post