তুরস্কের সাথে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও উন্নতিতে ‘প্রকাশ্যে ও একান্তে’ আলোচনা চালাচ্ছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কাতারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর নতুন করে তুরস্কের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে দেশ দুইটি এই আলোচনা করছে বলে ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়।
ব্লুমবার্গের ওই প্রতিবেদনে তুর্কি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যেই পারস্পরিক বাণিজ্যে বাধা দূর করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পর নতুন করে তা শুরুর পর আঙ্কারা ও আবুধাবী এই আলোচনায় অগ্রসর হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আরববিশ্ব জুড়ে থাকা রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য হুমকি মনে করছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর বিপরীতে তুরস্ক সংগঠনটিকে গণতান্ত্রিক দল বিবেচনা করে আসছে, যা রিয়াদ-আবুধাবী ও আঙ্কারার মধ্যে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথের পরই এই নাটকীয় পরিবর্তন আসে। ট্রাম্প পরবর্তী নতুন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার অংশ হিসেবে উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশগুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সম্পর্কের ফাটল মেরামতে রফতানি বাজারকে উভয়পক্ষের মধ্যে দর কষাকষির শক্তিশালী ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইরাকের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৯ সালে দুইপক্ষের মধ্যে আট বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। তুরস্ক দেশটিতে মূল্যবান পাথর থেকে বিমানের যন্ত্রাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে। অন্যদিকে তুরস্কে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করা সৌদি আরব রফতানির ক্রমাগত হ্রাস সত্ত্বেও দেশটির শীর্ষ আঞ্চলিক বাজারগুলোর অন্যতম।’
রিয়াদ ও আবুধাবী ২০১৩ সালে মিসরে তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করায় সহায়তা করে। মোহাম্মদ মুরসির সরকারের পতনের পর দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা তুরস্কে আশ্রয় নেয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের উপদেষ্টা ও ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) সদস্য ইয়াসিন আকতায় বলেন, ‘সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ড থেকে পালিয়ে আসা সাধারণ মানুষের জন্য তুরস্ক দরজা বন্ধ করবে না।’
জানুয়ারিতে সৌদি আরব ও মিত্র তিনদেশের সাথে কাতারের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পরই আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানান, দেশটি তুরস্কের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্কাইনিউজ আরাবিয়ার সাথে সাক্ষাতকারে আমিরাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘আমরা তুরস্ককে বলতে চাই, সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদার কাঠামোর মধ্যে আমাদের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের এক নম্বর বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে গারগাশ বলেন, ‘আমরা তুরস্কের সাথে কোনো বিবাদ জিইয়ে রাখতে চাই না।’
Discussion about this post