মুহাম্মাদ শোয়াইব: নিজেদের পঞ্চাশতম বছরে আরব আমিরাতের ‘দ্যা হোপ প্রোব’ মহাকাশযানটি গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মঙ্গলগ্রহে পৌঁছেছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই গত বছরের জুলাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সময় দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
এমিরেটস সেন্টার ফর স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের (ইসিএসএসআর) মহাপরিচালক ড. সুলতান মুহাম্মদ আল নুআইমী বলেছেন, হোপ প্রোব মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহের আশেপাশে কক্ষপথে পৌঁছানোর সাফল্য বৈজ্ঞানিক, গবেষণা এবং যৌক্তিক প্রচেষ্টার চূড়ান্ত প্রতিনিধিত্ব করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত রেড প্ল্যানেট অন্বেষণ-প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে সাত বছর সময় লেগেছে। তিনি বলেন, এখন মহাকাশযানটি তার বহুমুখী বৈজ্ঞানিক মিশন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
আল নুআইমী আরও বলেন, এটি আমাদের দুর্দান্ত সাফল্য। আমরা সবাই মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের পর থেকে অধীর আগ্রহে এ ঐতিহাসিক সাফল্যের প্রত্যাশা করেছিলাম। এ অগ্রণী প্রকল্প আমাদের দেশের প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রতিফলিত করে। আরব বিশ্বে এটি শুধু আমিরাতদের হাতে দিয়ে উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়েছে। এটি একটি দুর্দান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন, যে স্বপ্নটি দেখতেন প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। স্বপ্নটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের জ্ঞানী নেতৃত্ব কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
আল নুআইমী বলেন, ‘দ্যা হোপ প্রোব’ প্রকল্প একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যা দিয়ে আমরা আমাদের পঞ্চাশতম বছর ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছি।
আরব আমিরাতের সহ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক, শেখ মুহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেন, যেখানে বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারীর প্রতিকূলতায় ভুগছে, সেখানে আমরা মঙ্গলের চারপাশে পৌঁছানোর সাফল্য অর্জন করেছি। যা ইঙ্গিত প্রদান করে যে, আমিরাত বিশ্ব নেতৃত্বের পথে এগুচ্ছে।
আরব আমিরাতের ‘দ্যা হোপ প্রোব’ মহাকাশ যানটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি খলিফা বিন জায়েদ জানিয়েছেন, এটি প্রথমবারের মতো জনগণের ঐতিহাসিক সাফল্য। আরব বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মহাকাশের ইতিহাস রচনা করে আমিরাত।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মাদ বিন রাশেদ আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স ও সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ বিন জায়েদের প্রশংসা করেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ মহাকাশযানটি গত বছর জাপান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে পরীক্ষা করতে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি মঙ্গলগ্রহের আশেপাশে ক্যাপচার কক্ষপথে পৌঁছতে সক্ষম হয়। এর আগে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দুইবার মিশনের উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়েছিল। পরে মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাল। আর এ বছরটি আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী।
মিশনটির বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান সারাহ আল হামিরি মহাকাশযানটির সফল উৎক্ষেপণের পর তার স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, আরব আমিরাতের জন্য এ প্রভাব অনেকটা ৫১ বছর আগে আমেরিকার চাঁদে পা রাখার মতোই। সেটিও ২০শে জুলাই তারিখেই হয়েছিলো। আমিরাতের মহাকাশযানটিও গত বছরের ২০শে জুলাই হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে আরব আমিরাতের শিশুরা ২০শে জুলাই তারিখে ঘুম থেকে উঠে তাদের নিজস্ব অভিযানটি দেখতে পাবে, যা নতুন একটি বাস্তবতা। এটি তাদের নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
কেন মঙ্গলে আরব আমিরাত?
সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন একটি কাজে হাত দিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, যা এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ ও ভারত করতে পেরেছে। আরব আমিরাতের উচ্চাভিলাষ তাদের এ চ্যালেঞ্জটি নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মঙ্গল থেকে কিভাবে বাতাস কমে গেলো কিংবা পানির বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তবে হোপ মিশন আসলে পরিণত হয়েছে অনুপ্রেরণার বাহন হিসেবে। যা আরব আমিরাতসহ পুরো আরব অঞ্চলের তরুণদের বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে আকৃষ্ট করছে। দেশটির সরকার বলছে, এ মহাকাশযাত্রা তেমন কিছু প্রকল্পের অংশ, যা দেশটিকে তেল গ্যাস নির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
লেখক: গবেষক, ইসিএসএসআর.
Discussion about this post