বরগুনার পাথরঘাটায় সম্প্রতি কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হাতে দেশীয় অস্ত্র রাম দা, লাঠি নিয়ে তোলা সেলফি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিছুদিন আগে এমডি রিমন সরদার নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ওই ছবিগুলো আপলোড দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে মেয়েদের উত্যক্ত, জমি দখল করাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ওই ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিমন সরদার পদ্মা এলাকার জাকির সরদারের ছেলে। পৌর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক আবু সালেহ, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, ফরিদ সরদার ও নাইমসহ আরো কয়েকজন। ইতোমধ্যে ভাইরাল হওয়া পৌর ছাত্রলীগের দু’জনকে তাদের পদ থেকে বহিষ্কার করার জন্য জেলা কমিটির কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পাথরঘাটা ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলামসহ কিছু নামধারী ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা পাথরঘাটা বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানী ঘটায়। ওই ছাত্রীর ভাই প্রতিবাদ করলে তাকে পৌর ছাত্রলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম মুন্সির নেতৃত্বে মারধর করা হয় বলে জানা যায়। এ ঘটনার কিছু দিন পর পৌর ছাত্রলীগ ও সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে দেশী ধারাল অস্ত্র নিয়ে সেলফি ভাইরাল হয়।
এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর নানা মহলে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে ছবি ভাইরাল হওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে জমি দখল নেয়ার গুঞ্জন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, শুরুতেই এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না হলে বা আইনের আওতায় না আনা হলে বরগুনার রিফাত ও হৃদয়ের মতো নানা অপরাধের ঘটনা ঘটতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা জানান, আপলোড দেয়া ছবিগুলোর কেউ পাথরঘাটা পৌর ছাত্রলীগের নেতা ও কেউ পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। বিভিন্ন সময় তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
এর আগে, ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজ পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের প্রায় তিন মাস পর ৯ নভেম্বর পাথরঘাটা কলেজের নৈশপ্রহরী মো: জাহাঙ্গির হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তার দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো: মাহমুদ, পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট, পাথরঘাটা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মাহিদুল ইসলাম রায়হানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই সময় তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তরুণীকে ধর্ষণ করে হত্যার পর পুকরের পানিতে খুটির সাথে বেঁধে গুম করার তথ্য বেড়িয়ে আসে।
পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান জুয়েল জানান, ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী বা কিশোর গ্যাং এর কারণে এর আগে পাথরঘাটায় তরুণী হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এর জন্য কিশোর গ্যাং এবং নামধারী ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রসীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন জানান, পাথরঘাটায় দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় অভিভাবকবিহীন হয়ে পড়ার কারণে এরকম ঘটনা ঘটে আসছে। এই ছেলেদেরকে যারা দলে অর্ন্তভূক্ত করেছে তারা এর দায়ভার এড়াতে পারে না। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। আওয়ামী লীগ কখনোই এসব সমর্থন করে না।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন জানান, আমারা ওই ছবিগুলো দেখেছি ও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের আটকের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post