কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পীরকাশিমপুর গ্রামের দানু মিয়ার ছেলে মো. রহুল আমিন। স্ত্রী আর দুই সন্তানের ছোট পরিবারের সুখের আশায় ২ বছর আগে সৌদি আরব যান। ঋণ করে সৌদি যাওয়া রুহুল আমিনের আশা ছিল, বাড়িতে নিয়মিত টাকা পয়সা পাঠাবেন। সন্তানদের লেখাপড়াসহ পরিবার ভালোভাবে জীবন আগাতে পারবে। ৩ লাখ টাকা ঋণ থাকায় আর দেশে ফেরার সামর্থ্য হয় নি তার।
গত মাসের মাঝামাঝিতে একটি দুঃসংবাদে হত-দরিদ্র ওই পরিবারের নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রুহুল আমিন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে সৌদি আরবের হাসপাতালে মারা যান। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় যখন দিশেহারা তখন আরও একটি দুঃসংবাদ এই পরিবারকে খুঁড়ে খাবে আজীবন। প্রিয়জনকে শেষ বিদায়টা জানাতে পারলো হকভাগ্য এই প্রবাসী পরিবার।
হাসপাতালের বিল পরিশোধ এবং বিমানে দেশে আনার টিকেট কাটা হলেও সৌদি আরবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে মৃত রুহুল আমিনের মরদেহ চলে যায় পাকিস্তানে। এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা। মরদেহ বদলের এমন ঘটনায় এলাকাবাসীও রীতিমত হতবাক।
পরিবারের সুখের আশায় রুহুল আমিন ঋণ করে ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর সৌদি আরবে যান। কিন্তু গত ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তিনি মারা যান। এতে হত-দরিদ্র ওই পরিবারের নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া।
রুহুল আমিনের স্ত্রী মিলি আক্তার জানান, তার স্বামী সৌদি আরবে মারা যাওয়ার পরদিন মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) শোয়াইব আহমাদ খান গত ২২ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের কাউন্সেলরের (শ্রম) নিকট পত্র প্রেরণ করেন।
রুহুল আমিনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে শোকাহত পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসার আড়াই লাখ টাকা স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে পরিশোধ করেন এবং বিমানযোগে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৩টি টিকেট ক্রয় করেন। বাড়ির পাশে দাফনের জন্য কবরস্থানও চিহ্নিত করা হয়। পরে জানতে পারেন সৌদি আরবের কিং ফয়সাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে। পরে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
রুহুল আমিনের ভাই মুজিবুর রহমান জানান, ‘আমার ভাইয়ের মরদেহ আনার জন্য এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেছিলাম। দাফনের জন্য কবরস্থানের জায়গাও চিহ্নিত করেছিলাম। কিন্তু ভাইয়ের মরদেহ চলে গেছে পাকিস্তানে। আমার ভাইয়ের অসহায় এ পরিবারটির দিকে সরকার খেয়াল রাখলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’
এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘দুঃখজনক এ ঘটনার জন্য আমরা সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দোষারোপ করেছি, কারণ এই কফিনটি তারাই রিলিজ করেছে।
এ নিয়ে মৃত ব্যক্তির মনোনীত কর্তৃক গভর্নর অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আর আমাদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে নিহত রুহুল আমিনের পরিবার যে ধরণের সহযোগিতা চাইবে আমরা তা করব।’
রহুল আমিন প্রায় ১৫ বছর আগে একই উপজেলার চন্দনাইল গ্রামের বেদন মিয়ার মেয়ে মিলি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের বড় ছেলে রিদওয়ান হাসান (১৩) স্থানীয় মাদরাসায় ৭ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে রাইয়ান হাসান (৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র। বর্তমানে মিলি আক্তার তার স্বামীর রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা এবং দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
Discussion about this post