চলতি মাসের শুরু থেকে আমিরাত প্রবাসীদের মধ্যে একটাই প্রশ্ন কে দেবে ক্ষতিপূরণ! যেসকল প্রবাসীরা নিকট আত্মীয়দের জন্য এখান থেকে ভিজিট ভিসা পাঠিয়েছেন এবং আমিরাতে আসার জন্য যারা মোটা অংকের বিনিময়ে টিকেট ক্রয় করে ছিলেন তাদের এই টাকা কিভাবে ফেরত পাবে! কে দেবে ফেরত ! এদের মধ্যে বহুসংখ্যক লোক আছে যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ভিজিট ভিসা ও টিকিট ক্রয় করেছে তাদের এখন কি হাল হবে! তাদের দুরবস্থার কথা কে চিন্তা করবে!
এতসব প্রশ্নের কারণ হচ্ছে! অক্টোবর মাসের প্রথম দিন থেকে কোন ঘোষণা ছাড়াই ভিজিট ভিসায় আমিরাতে আসতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ভিজিট ভিসা বাতিল করে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পাসপোর্টে অফলোড সিল মেরে দেওয়া হচ্ছে। বলা যায় আমিরাতে আসতে আগ্রহীদের কাছে নতুন এক আতঙ্কের নাম ‘অফলোড’। কেবলমাত্র তাদেরই পাস দিচ্ছে যাদের পরিবারের কোন সদস্য আমিরাতে অবস্থান করছেন। আমিরাত থেকে পরিবারের সেই লোকের বৈধ কাগজপত্র পাঠিয়ে পাস নিতে হচ্ছে।
ভিজিট ভিসায় আসার ক্ষেত্রে আমিরাতের কোন বাঁধা নেই। বাঁধা নেই বলেই আমিরাত সরকার ভিজিট ভিসা দিচ্ছে। ভিজিটে আমিরাতে আসার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা কিংবা স্থগিত রাখার প্রয়োজন ছিল কিন্তু এভাবে হঠাৎ ভিজিট নিয়ে আমিরাতে আসতে না দেওয়ায় অসংখ্য পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিজিট ভিসার খরচ ও টিকেট দুটোই অপচয়। অন্তত এক দু মাস পূর্বে ঘোষণা দিয়ে এই পদক্ষেপ নিলে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত মনে করা যেত।
এদিকে ভিজিটে এসে আহামরি কোন লাভ হচ্ছে সেটাও না।সকলেই অবগত আছেন, আমিরাতে ২০১২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে শ্রমবাজার বন্ধ। ভিসা বন্ধ থাকলেও আমিরাতে গত ২ বছর থেকে ভ্রমণ বা ভিজিট ভিসা সহজ করা হয়। ভিজিট ভিসা সহজ হওয়ায় দেশের বহুসংখ্যক যুবক আমিরাতে প্রবেশ করে। এক তথ্যে জানা গেছে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি আমিরাতে ভিজিট ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন।
এখানে এসে কেউ ইনভেস্টর বা ব্যবসায়িক ভিসা লাগিয়ে বৈধ হচ্ছে। অনেকে আবার ভিজিট ভিসার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীক ভিসা না লাগিয়ে অথবা দেশে ফেরত না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করা শুরু করেন। কেউ আবার ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে যান।
দেশে অবস্থানরত যুবকদের ধারণা আমিরাতে যেহেতু ভিজিটে গিয়ে ভিসা লাগানো যাচ্ছে সেহেতু কাজের অভাব হবে না। কিন্তু এখানে এসে দেখে ভিন্নতা। ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ভিজিট ভিসা ক্রয় করে এসে কাজ না পেয়ে অভিযোগ করাটা বোকামি,কারণ ভিজিট ভিসা মানে কাজের ভিসা নয়। গত দুই বছরে যারা ভিজিটে এসেছেন তাদের মধ্য থেকে অনেকেই কাজ না পেয়ে পড়েছেন বিপাকে। ভিজিটে আসা লোকদের অধিকাংশই যুবক। যাদের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে। এই বয়েসে দূর প্রবাসে এসে যদি বিপাকে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
ভিজিটে আসার ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির হিসেবের চেয়ে বর্তমানে আসতে না দেওয়ার লাভ-ক্ষতি নিয়ে ভাবা জরুরি। যেহেতু লাখ টাকার বিনিময়ে ভিজিট ভিসা ও টিকেট ক্রয় করা হয়ে গেছে সেহেতু বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোটা দুঃখজনক। বলা বাহুল্য পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এমন পদক্ষেপের ফলে প্রবাস গমনেচ্ছু ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া যারা কেবলই পর্যটক হিসেবে ভিজিটে আসতে চেয়েছিলেন তাদেরকে আমিরাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত রাখা হলো।
Discussion about this post