মোবারক ভূইয়া , সৌদি আরব:
আইসিইউতে থেকেও পরিবার সন্তান, দেশে যাওয়া আমার খুবই দরকার। আমি বেঁচে না থাকলে ওরা কিভাবে চলবে! কথা গুলো ২৩ বৎসর ধরে সৌদিআরবে বসবাসরত প্রবাসী জসিম উদ্দিনের। গত ৮ দিন ধরে সৌদি জার্মান হাসপাতালে আইসিইউতে আছেন, এর মধ্যে অপারেশন হয়েছে।
চেহারা, মাথায় চুল, এই বয়সেও অনেক স্মার্ট। এমন মানুষকে আমার নিজ গ্রামে দেখেনি। তিনিও আমাকে কোনদিন দেখেনি, দেখলেও ছোট বয়সে দেখেছে মনে নেই। আজকের দিন সহ ৪ দিন আমি ওনাকে দেখতে গিয়েছিলাম, তার মধ্যে দুই তিনি আমাকে দেখেছে, বাকি দুইদিন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন।
প্রথম দিন আমি পরিচয় দিয়েছি, আমি মোবারক। পুরোপুরি চিনতে পেরেছিলো কিনা জানা নেই।আজ আমার ডিউটি শেষ হয় স্থানীয় সময় রাত ৯ টায়। সরাসরি চলে গেলাম হাসপাতালে, যেহেতু তিনি আইসিইউতে আছে। সাক্ষাৎ’র কিছু নিয়ম আছে, বিকেল ৩ থেকে ৪ পর্যন্ত সাক্ষাৎ সময়। সিকিউরিটি গার্ড গিয়ে বললাম, বিস্তারিত। দেখা করা খুবেই দরকার। সে আমাকে শর্ত দিয়েছে এক প্যাকেট সিগারেট এনে দেয়, আমি তোকে ঢুকতে দিবো। শর্ত মেনে তার দেওয়া টাকা দিয়ে সিগারেট এনে দিয়ে ১০ মিনিট সময় জন্য ভিতরে ঢুকতে দেয়।
ভিতরে ঢুকে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে আমি মাথায় হাত দিলাম কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে দেখে। কখন এসেছো, কি নাম তোমার উত্তর দিলাম। এ অবস্থাতেও পরিবারের কথা, তুমি বলিও ইনশাআল্লাহ আমি ভালো হয়ে যাবো। আমি না থাকলে তারা কেমনে চলবে! আমি আমার নিজেকে কোনমতে কন্ট্রোল করে চোখের পানি পড়ার আগে বিদায় নিলাম ।
দেশের পরিবার প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত খবর চায় আমার ভাই কেমন আছে, স্ত্রী, আমার স্বামী কেমন আছে। অসুস্থ প্রবাসী ও হাসপাতালে বসে ছোট ছোট সন্তানদের চিন্তায়। ২০/২৫ বৎসর বিদেশে কামলা দিয়ে প্রবাসী ফিরবে খালি হাতে৷ বাকি জীবন দুঃখে কষ্টে। কারণ তার কোন পেনশন ভাতা নেই।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
সময়ঃ রাত ১ঃ৩০ মিনিট
জেদ্দা, সৌদিআরব
Discussion about this post