মোহাম্মদ এনামুল হক
হিজরী সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম শব্দের অর্থ হলো নিষিদ্ধ, অলঙ্ঘনীয় পবিত্র, সম্মানিত, তাৎপর্যপূর্ণ ইত্যাদি। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলা হয়েছে মহররম মাস তাদের একটি। যেমন আল্লাহপাক সূরা তওবার ৩৬ নং আয়াতে এরশাদ করেন- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।
মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা নামে অভিহিত করা হয়েছে। আশুরা শব্দের অর্থ দশম। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা একটি পবিত্র, তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। আশুরার দিনটি অনেক ঘটনাবহুল। এদিন পৃথিবীতে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়লা আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করে জান্নাতে রাখেন, এরপর জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ এবং তওবা কুবল করেন আশুরার দিন। আশুরার দিন মহাপ্লাবন শেষে হযরত নূহ (আঃ)এর কিশতী বা নৌকা জুদি পাহাড়ে এসে থেমেছিলো। এদিন আল্লাহ তায়লা ফেরাউন ও তার বাহিনিকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন এবং হযরত মুসা (আঃ)ও তাঁর কাওমকে সমুদ্র পার করে নিয়েছেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিস্কৃতি পেয়েছেন ১০ মহররম বা আশুরার দিন। আশুরা দিবসে হযরত ইউনুস (আঃ)কে আল্লাহ মাছের পেট থেকে বের করে নিয়ে আসেন। হযরত ইউছুফ (আঃ)অন্ধকার কূপ থেকে উদ্ধার হয়েছেন আশুরার দিনে। কুষ্ঠরোগ থেকে হযরত আইয়ুব (আঃ) সুস্থ হয়ে ওঠেন আশুরার দিন এবং হযরত ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তায়লা আসমানে তুলে নেন।
৬১ হিজরীর ১০ মহররম বেদনাদায়ক ও ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে কারবালা প্রান্তরে। কারবালার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক, দুঃখজনক ও স্মরণীয় ঘটনা। মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের ৫০ বছর পর ১০ মহররম ৬১ হিজরী মোতাবেক ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর বর্তমান ইরাকের কারবালা নামক স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ)সহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ও অনুসারীগণ মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। এদিন কারবালা প্রান্তরে এজিদের সেনারা যে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও পৈশাচিকভাবে হযরত হুসাইন (রাঃ) হত্যা করেছে তা ইতিহাসে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মদিনায় হিজরতের পর রাসুলুলল্লাহ (সাঃ) লক্ষ্য করলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যাতে তোমরা রোজা রেখেছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি প্রদান করেছিলেন এবং ফেরাউনকে তার সম্প্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এদিন রোজা রাখেন, এজন্য আমরাও রোজা রাখি। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আঃ)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (বুখারী/ হাদিস (১৮৬৫)।
আশুরার দিন বুক থাপড়িয়ে বিলাপ না করে এবং নিজ শরীর জখম না করে রোজা রাখা ও আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকাই মুসলমানদের জন্য উত্তম কাজ।
Discussion about this post