শাহাদাত হুসাইন, সৌদি আরব: রোজার কিছুদিন আগের কথা। বাংলাদেশ দূতাবাস সৌদি আরব’র কর্মকর্তা জনাব ফয়সাল আহমদের একটি পোস্ট পেলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে”মৃতের লাশগ্রহণকারীর তঁথ্য প্রয়োজন, পরিচিতরা সাহায্য করুন।”শিরোনামে লেখাটি দেখে হৃদয়টা মুচরে উঠলো।কারন আমিও যে একজন প্রবাসী।দুঃখটা আরো বেশী হল এই ভেবে যে তার স্বজন খুঁজতে অনলাইনের আশ্রয় নিতে হল।ওনার লেখাটি কপি করে আমার ফেসবুকওয়ালে পোস্ট করলাম।সাহায্য চাইলাম লক্ষীপুরের বন্ধুদের। আমার পোস্ট মুহুর্তেই ছড়িয়ে গেল বন্ধুদের ওয়ালে।কিছুক্ষনের মধ্যেই পেয়েগেলাম প্রবাসীর গ্রামের এক লোককে।তার মাধ্যমে পাওয়া গেল প্রবাসীর ভাগিনা আব্দুর রহিমকে।তার নাম্বারে ফোন দিলাম।
কথা হল দীর্ঘ সময়। চোখের পানির আদান-প্রদান হল দু’জনেরই। কারন মৃতের ভাগিনা আব্দুর রহিমও একজন প্রবাসী। হৃদয়ের কথা-ব্যাথা খুব সহজেই বুজা যায় যেন। তাঁর নাম্বারটি দূতাবাস কর্মকর্তার নিকট দিলাম। যোগাযোগ করলেন তারা।ব্যাকুল হয়ে আছেন তাঁর স্বজনেরা কখন লাশ যাবে। ছোট্ট সন্তান বাবাকে দেখবে। বাবার নিথর দেহ দেখার অপেক্ষায়। অপেক্ষায় তার বিধবা স্ত্রী। হেলাল মিয়ার মৃত্যুর খবর ওরা পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার লাশটা দেশে কিভাবে নিবেন সে পথ খুঁজে পাচ্ছিলনা।এক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসলেন বাংলাদেশ দূতাবাস। তাদের আন্তরিক সহযোগীতায় হেলাল মিয়ার লাশ আজ ১৪-০৬-২০১৯ দেশে যাচ্ছে(হেলাল উদ্দিন বিগত একবছর যাবত ভিসাবিহীন ছিলেন)
হেলাল উদ্দিন, পিতাঃ মাকসুদূর রহমান, গ্রামঃরঘাতপুর, দুই নং ওয়ার্ড, পোঃ কালামিয়া পন্ডিতের হাঠ, থানাঃ রামগতি, জেলাঃ লক্ষিপুর।এইটা তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়। ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনের সময় তার জন্ম। সংসারের অভাব ঘোচানোর তাগিদেই অনেক কষ্ট আর ঋণ করে এক সময় পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। ওখানে বেশ ভালই ছিলেন হেলাল উদ্দিন। নিজের আপনজনের অনেক সদস্যকেই ভিসা দিয়ে নিয়েছিলেন ওমানে। এক সময় চলে আসেন দেশে। যাদেরকে সাবলম্বী করেছেন তারা মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
বেশ ক’বছর দেশে থেকে আবারো পাড়ি জমান মরুদেশ সৌদি আরব ৷ এখানেও চলছিল কোনরকম। সংসারের সুখের পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে যৌবনের ভরা সময়টা পার করে দিলেন নিজেও জানেননা। একসময় সংসারী হলেন বর্তমানে সাত ও চার বছরের একটি মেয়ে ও ছেলে আছে তার।
তিনি বিগত ০৪/০৫/২০১৯ইং তারিখে সৌদি আরবের আল খোবার শহরের ত্বোকবাতে মৃত্যুবরণ করেন। ফ্রি ভিসায় কর্মরত ছিলেন। দূতাবাসের সহযোগিতায় তাঁর কফিলকে তায়েফ হতে তলব করে আল খোবারে আনা হয়েছে। কফিল মৃতদেহ প্রেরণের খরচ সহ সকল কার্যক্রম সম্পাদন করেছেন। দূতাবাসের দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতায় কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় হেলাল উদ্দিনের পরিবার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
হেলাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে এক বাংলাদেশী কন্ট্টাকটারের অধীনে কাজ করতেন। বেশ ক’মাসের বেতনও তার কাছে পাওনা রয়েছে অথচ তিনি তা পরিশোধ না করে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। হেলাল উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে দেশ থেকে কিছু টাকা এনেছিলেন তার কাগজপত্র ঠিক করার জন্য। দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও কিছু টাকা এনেছেন সেই টাকা স্ব-দেশী রুম পার্টনার খরচ করে ফেলেছেন। আমি তাকে ফোন করে বললাম আমি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার সংবাদকর্মী। আপনার কাছে যে টাকাগুলো আছে তা ফেরত দেন না হয় আপনার বিরুদ্ধে পত্রিকায় ও টিভিতে রিপোর্ট হবে। ভয় পেয়ে কিছু টাকা ফেরত দেন।
আমার কথা: একজন প্রবাসীর দু-চোখ ভরে স্বপ্ন থাকে বেশ অর্থকড়ি কামাই করবো। পরিবারের অভাব ঘুচিয়ে কিছু ব্যালেন্স জমা করে জীবনের বাকি সময়টা আরামে কাটাবে। এই স্বপ্ন কারো পুরন হয়। কারো পুরন হওয়ার আগেই পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। আর সে যদি হয় সংসারের একমাত্র উপার্জনের ব্যাক্তি তাহলে পুরো পরিবারটাই বেঁচেও মরে যাওয়ার মতই সময় কাটান। একজন প্রবাসী তাঁর দেশের সম্পদ। তার রেমিটেন্সে সরকার উপকৃত হয়। প্রবাসীদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত রেমিটেন্সে দেশের অর্থনিতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রবাসীদের অকাল চলে যাওয়া বা দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে চলে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য সরকারী ভাতার ব্যাবস্থা করা হোক। পরিশেষে হেলাল উদ্দিন ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি।শোকাহত পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা।
শাহাদাত হুসাইন, ইনচার্জ: দৈনিক আলোকিত সকাল, সৌদি আরব।
Discussion about this post