নামাজের জন্য ডাকা হয় আজান দিয়ে। আজান মহা কল্যাণের হাতছানি দেয়। আজান নব উদ্যমে জাগরণের প্রতীক। ফজরের আজানের আওয়াজে সারা পৃথিবীর ঘুম ভাঙে। কোনো কোনো গবেষণা বলছে, পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে সব সময় আজান হয়।
ফজরের পবিত্র আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে মুসলমানের। তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য, নামাজ ও কল্যাণের আহ্বানে দিন শুরু হয় তাদের। ঘোষণা করা হয়, হে মানব! ওঠো, ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম। শুধু স্রষ্টার ইবাদত নয়, জাগতিক অনেক বিচারেও ফজরের আজানের এই আহ্বান কল্যাণের বাহক। আধুনিক যুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সকালের নির্মল বায়ু, সূর্যালোক ও কায়িক পরিশ্রমকে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে সূর্যালোক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার মতও দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আর এর সবই সম্ভব হবে, যদি ফজরের আজানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ সূর্য জেগে ওঠার আগে জেগে ওঠে।
আজান কল্যাণের পথে আহ্বান করে, আজান কল্যাণের ধারক। আর সেই কল্যাণের ধারা পৃথিবীব্যাপী অব্যাহত থাকে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা। এটা মুসলিম বিশ্বের হিসাবে। আর যদি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের শেষ শহর হিসাব করা হয় তাহলে ফজরের আজানের দৈর্ঘ্য হবে আরো বেশি।
মুসলিম বিশ্বের সর্ব পূর্বের শহর ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি এবং সর্ব পশ্চিমের শহর মৌরিতানিয়ার নাওজিবো। গ্রিনিচ মান সময়ের হিসাবে উভয় দেশের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ৯ ঘণ্টা। অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ায় ফজরের আজান শুরু হওয়ার ৯ ঘণ্টা পর আজান হয় আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি দ্বীপে আজান শুরু হওয়ার পর তা ক্রমেই পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হয়। অগ্রসরমাণ আজানের ধ্বনি প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবেই অগ্রসর হতে থাকে।
আজানের ধ্বনি পূর্ব থেকে পশ্চিমে অগ্রসর হওয়ার ধারাক্রমটি এমন—ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, মিসর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া। তবে তারও আগে আজান হয় জাপানের নিমুরো দ্বীপে। সেখানে ফজরের আজান হয় রাত ১টা ৫৭ মিনিটে (১২ মে)। আর সর্বশেষ আজান হয় আমেরিকার আলাস্কা প্রদেশের শেষ প্রান্তে। জাপানের নিমুরো দ্বীপে মুসলিম কমিউনিটির ছোট একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেলেও আলাস্কা প্রদেশের শেষ প্রান্তে ঠিক কোথায় মসজিদ রয়েছে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। শুধু ফজর নয়, পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজান হয় ৯ ঘণ্টা ধরে।
Discussion about this post