মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আজ যেন ক্রিকেটের এক রোমাঞ্চ নাটক মঞ্চস্থ হলো। শেষ বল পর্যন্ত হৃৎস্পন্দন বাড়ানো এক ম্যাচ, যেখানে জয়ের দরজায় পৌঁছে গিয়েও বাংলাদেশকে থামতে হলো হতাশার এক ধাপে। ৫০ ওভার শেষে ম্যাচ টাই, এরপর সুপার ওভারের উত্তেজনা—শেষ পর্যন্ত মাত্র ১ রানের হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পরাজিত টাইগাররা।
এ ছিল একেবারে ‘ক্রিকেট থ্রিলার’। শুরু থেকে শেষ—উত্থান-পতন, ভুল-সাফল্য, সুযোগ-মিস—সব মিলিয়ে এক সম্পূর্ণ নাট্যমঞ্চ। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গ্যালারিতে যখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে ছিলো দর্শক, তখনই হয়তো ভাগ্যের রেখাটা সরে গেল বাংলাদেশ দলের হাত থেকে।টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো সূচনা পায়নি বাংলাদেশ। ওপেনার সাইফ হাসান ১৬ বলে ৬ রান করে বিদায় নেন। অপর প্রান্তে সৌম্য সরকার লড়ছিলেন ধৈর্য ধরে, কিন্তু সঙ্গী পাচ্ছিলেন না কেউ। তাওহিদ হৃদয় (১২), শান্ত (১৫), অঙ্কন (১৭)—সবাই শুরুটা পেলেও থিতু হতে পারেননি।তবে এক প্রান্তে লড়তে থাকা সৌম্য ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়াতে থাকেন। পঞ্চাশের দোরগোড়ায় এসে ৮৯ বলে ৪৫ রানে ফেরেন তিনি। তার পর ইনিংসটা ধরে রাখেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৮ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ভরসা দেন।শেষ দিকে ইনিংসের রঙ পাল্টে দেন রিশাদ হোসেন। ১৪ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে তিনটি করে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে যান ২১৩ রানে।ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গুডাকেশ মোতি নেন ৩ উইকেট, ২টি করে পান আকিল হোসেইন ও আলিক আথানাজে।
জবাবে শুরুতেই বাংলাদেশ আঘাত হানে। নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে ফিরেন ব্রেন্ডন কিং—প্রথম ওভারেই শূন্য রানে বিদায়। এরপরও ব্যাটিংয়ে স্থিতি আনেন আথানাজে (২৮) ও কেসি কার্টি (৩৫), কিন্তু রিশাদ হোসেনের স্পিনে আবারও বিপর্যয়।
৯০ রানের মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় ৪ উইকেট, পরে তানভীর ইসলামের দাপটে আরও বিপাকে পড়ে সফরকারীরা। ১৩৩ রানে ৭ উইকেট পড়ে গেলে মনে হচ্ছিল, এখানেই ম্যাচ শেষ।
কিন্তু অধিনায়ক শাই হোপ নামের সঙ্গে যে ‘আশা’ শব্দটা মিশে আছে, তা যেন ক্রিকেটকেও ছুঁয়ে যায়। একাই হাল ধরে রাখেন দলকে, সঙ্গে পান জাস্টিন গ্রেভসকে। ৮ম উইকেটে দুজন গড়েন গুরুত্বপূর্ণ ৪৪ রানের জুটি।
গ্রেভসকে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে মিরাজ সেই জুটি ভাঙলেও, আশা তখনও বেঁচে ছিল।
শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ২৫ রান। মিরাজের ওভারে আসে ১১, ফিজের ওভারে ৯—শেষ ওভারে সমীকরণ ৫ রানে নেমে আসে। বোলিংয়ে আসেন সাইফ হাসান।
প্রথম দুই বল ডট। তৃতীয় বলে এক রান। এরপর চাপে থাকা হোপ নেন সিঙ্গেল। ২ বলে দরকার ৩ রান। পঞ্চম বলে আকিল বোল্ড! শেষ বলে ৩ রান দরকার, পিয়ের ক্যাচ দেন সোহানের হাতে—কিন্তু মিস! ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেয় ২ রান। ম্যাচ টাই!
সুপার ওভারে প্রথম ব্যাটিংয়ে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে হোপ-রাদারফোর্ডরা তুলে নেন ১০ রান। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য—১১।
ব্যাট হাতে সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। শুরুটা দারুণ—প্রথম বলেই ওয়াইড, তারপর নো-বল, সঙ্গে ২ রান! মাত্র ১ বলে ৫ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু এখানেই মোড় ঘুরে যায়। পরের বলে ডট, তারপর সিঙ্গেল, এরপর সৌম্যর ক্যাচ, শান্ত আসেন ক্রিজে। ১ বলে দরকার ছিল ৪ রান—আকিল হোসেইনের বল ওয়াইড, তবুও শেষ বলে কেবল এক রানই নিতে পারেন সাইফ।
মাত্র ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। গ্যালারিতে নেমে আসে স্তব্ধতা। দলের মুখেও হতাশার ছায়া।
এই জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১-১)। তিন ম্যাচের সিরিজের নির্ধারণী ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২৩ অক্টোবর, একই মাঠে।
সেই ম্যাচই এখন নির্ধারণ করবে—বাংলাদেশ কি ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের হাসি হাসবে, নাকি ক্যারিবিয়ানরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করবে।