আসন্ন ২০২৬ সালের হজ মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে হজে যেতে ইচ্ছুক মুসল্লিদের আবেদন পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক—৭২ হাজার। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কোটায় এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৬ হাজার ২২৮ জন।সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাধারণ ইসলামিক বিষয়ক, ওয়াকফ ও জাকাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৬ সালের হজ মৌসুমে দেশটির নাগরিকদের কাছ থেকে প্রায় ৭২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের স্মার্ট অ্যাপ ও সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, যা শেষ হয়েছে গত ৯ অক্টোবর।
কর্তৃপক্ষ জানায়, আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে এবং সব শর্ত পূরণের পর প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানা হবে ২০১৮ সালের মন্ত্রিপরিষদ প্রজ্ঞাপন নম্বর ৩২, যা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা নির্ধারণ করেছে।সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ অনুযায়ী, আগামী হজ মৌসুমে ইউএই-এর সরকারি হজ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২২৮ জনের জন্য।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব আবেদনকারী প্রাথমিক অনুমোদন পাবেন, তাদের নিবন্ধিত ফোন নম্বরেই বার্তা পাঠানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আবেদনকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। হজ পারমিট প্রদানের পুরো কার্যক্রম সময়সীমার মধ্যেই শেষ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানানো হয়।ইউএই নাগরিকদের জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। যারা আগে কখনো হজ করেননি, শুধু তারাই এতে আবেদন করতে পেরেছেন। নিবন্ধন করা হয় কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
প্রার্থীদের হজের প্রস্তুতি নিতে এবং নির্বাচনের ইলেকট্রনিক সিস্টেমে নির্ধারিত শর্তসমূহ পূরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর নীতির অংশ হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রক্রিয়াটি সহজ ও স্বচ্ছ করা হয়েছে।ইউএই হজ বিষয়ক দপ্তর জানায়, হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা ও যত্ন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পবিত্র স্থানগুলোয় হাজিদের সকল প্রয়োজন পূরণের জন্য দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সংস্থাটি।
দপ্তর আরও জানায়, হজ পরিচালনায় উৎকর্ষ, গুণগত মান ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়নে তারা সরকার ঘোষিত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছে।
ইউএই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রার শুরু থেকে হাজিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তারা সহায়তা দেবে, বিশেষ করে বয়স্ক হাজিদের জন্য বিশেষ মনোযোগ থাকবে।
মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে প্রতিটি গন্তব্যের জন্য ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি আপডেট করেছে।
পাসপোর্ট হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ‘রিটার্ন ডকুমেন্ট’ বা ফেরত নথি ৩০ মিনিটের মধ্যেই ইস্যু করা যাবে বলেও জানানো হয়। এজন্য হাজিদের নিজেদের পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
হজ মৌসুম সামনে রেখে ইউএই স্বাস্থ্য ও প্রতিরোধ মন্ত্রণালয় ‘একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হজ’ শিরোনামে জাতীয় সচেতনতামূলক অভিযান শুরু করেছে। এতে অংশ নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা।
অভিযানের লক্ষ্য হলো হাজিদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং যাত্রার আগে, চলাকালে ও পরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া।
এতে হাজিদের জন্য বহুভাষিক স্বাস্থ্য নির্দেশিকা, অনলাইন জিজ্ঞাসা সেবা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান, এমনকি মানসিক সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব উদ্যোগ হাজিদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
অভিযানে জানানো হয়, যাত্রার আগে মেনিনজাইটিস, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া টিকার ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া গরমে ক্লান্তি, আঘাত বা খাদ্যজনিত অসুস্থতা এড়াতে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইসলামিক বিষয়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউএই হাজিদের শান্তিপূর্ণভাবে হজ পালনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে হজের শিক্ষামূলক উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতার মাধ্যমে সার্বিক সেবা উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে।