হাটহাজারীতে বোনের সম্পত্তির লোভে কাতার প্রবাসী ছোট ভাইয়ের মারধরে বড় বোন ও শ্বাশুড়িকে বাঁচাতে গিয়ে মামা শশুড়ের মারধরে তিন মাসের অন্তঃস্বত্তা পুত্রবধূর আগত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ১৩ জুন শুক্রবার রাত দশটার দিকে উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডস্থ জান আলি চৌধুরীর বাড়িতে ঘটে। ঘটনার পর দীর্ঘ ২৫ দিন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে গুরুতর আহত হোসনে আরা বেগম(৬০) কে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। একইদিন সন্ধ্যার পর নামাজে জানাযা শেষে মরহুমাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত ওই বাড়ির মৃত ইমাম শরীফের মেয়ে ও মো. স্ত্রী।
সরেজমিনে প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহতের ছোট ভাই কাতার প্রবাসী আমির হোসেন (৫৫) ও তার স্ত্রী মুন্নি আকতার(৪৫) ঘটনার দিন রাত দশটার দিকে নিহত এশার নামাজ শেষে দোয়া করাকালে ঘরে ডুকে জলন্ত আগরবাতি জালানোর অজুহাতে দেখিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক মারধর করে। ঘরের নিজ রুমে থাকা তিন মাসের অন্তঃস্বত্তা পুত্রবধূ রোশা আক্তার(৩২) শাশুড়িকে বাঁচাতে গেলে গালমন্দ করার এক পর্যায়ে তার বুকে ও পেটে সজোরে লাথি মারতে থাকে। বউ শাশুড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আমির হোসেনের স্ত্রী দৌড়ে ঘর থেকে রাস্তায় গিয়ে তাদের ছেলে আরফাত (২১)কে উল্টো আহতরা তাদের মারধর করেছে অভিযোগ করলে আরফাত দৌড়ে গিয়ে গুরুতর আহতদের পুনরায় মারধর করে। এদিকে বাড়ির কিনারায় নিহতের আলি আকবর নামে আরেক ছোট ভাই নিহতের ছেলে আলি হোসেনকে দেখে তার স্ত্রী ও মা আমির হোসেন ও তার স্ত্রী মুন্নি বেগমের সাথে বিবাদে জড়িয়েছে জানালে সে ঘরে গিয়ে দেখে তার মা অজ্ঞান ও স্ত্রী ব্যথায় চটপট করছে। তাদের উদ্ধার করে হাটহাজারী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিলেও চমেক রেফার করে গুরুতর আহত ষাটোর্ধ মাকে। চমেকের কর্তব্যরত আইসিইউতে রেফার করলেও খালি না থাকায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। বিশদিন পর অবস্থা আরো অবনতি হলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলে পুনরায় চমেকের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে মঙ্গলবার মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুত্রবধূ রোশা আকতার বলেন, নিহত নিজ রুমে নামাজ শেষে তসবিহ পড়ছিলেন। হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন অভিযুক্তরা তাকে মারধর করছেন। লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করছেন। মাটিতে ফেলে তাকে পা দিয়ে চেপে ধরছেন। বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর পরীক্ষা শেষে জানতে পারলেন তার তিন মাসের সন্তান মারা গেছে। ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি ভিটাতে বসবাস করাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে তার শ্বাশুড়ির। সব সময় আমির হোসেনের স্ত্রী মুন্নি বেগম জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য ধমকির পাশাপাশি না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তার প্রবাসী স্বামীও মোবাইলে বহুবার বাড়ি না ছাড়লে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
নিহতের তিন সহোদর মনোয়ারা বেগম, রওশন আরা বেগম ও ছেমন আরা বেগম এবং বড় ভাই মো. হোছেন (৬৮) তাদের বোনকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, ঘটনার আগে তাদের খুনি ভাই ও তার স্ত্রী বাড়ির চারদিক ঘুরে অবস্থা বুঝে হামলা চালিয়েছে। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ নিহত পৈত্রিক জায়গায় স্বামী নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ঠিক তখন থেকেই আমির হোসেন পরবর্তীতে তার স্ত্রীসহ ওই জায়গা ভোগ দখলের জন্য একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছেন। স্থানীয়ভাবে আগেও এ নিয়ে সালিশ হয়েছে। চলতি বছরের রমজানের আগে কাতার থেকে বাড়ি এসেই হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। যার সমাপ্তি ১৩ জুন রাতে শেষ হয়। তারা জানান, যতটুকু সংবাদ পেয়েছি ঘটনার একদিন পর কাতার পাড়ি জমিয়েছেন অভিযুক্ত আমির হোসেন। অন্য অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন অন্য কোথাও। হত্যায় অংশ নেয়া আমির হোসেন তার স্ত্রী মুন্নি বেগম ও তাদের পুত্র আরফাত হোসেন এবং প্রত্যক্ষ মদদদাতা আলি আকবরসহ দোষিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তারা। এদিকে ঘটনার পর পৃথক পৃথক সময়ে হাটহাজারী মডেল থানায় নিহতের পুত্রবধূ ও চট্টগ্রাম আদালতে তার পুত্র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার সত্যতা স্বীকার করে মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন বলেন, আসামি গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
Discussion about this post