সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য । যিনি ঈমানদারদের হৃদয়ে নামাজকে শান্তি প্রশান্তির বাহন বানিয়েছেন । ইবাদতকারীদের আত্মা সমূহকে আরামদায়ক করেছেন ।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মহানবী মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রসুল ও বান্দা । তাঁর উপর সীমাহীন রহমত নাজিল হোক । তাঁর পরিবার সাহাবী তাবেঈন সহ সকলের উপর রহমত বর্ষিত হোক ।
তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং তাঁকে ভয় করো, যার কাছে তোমরা সবাই একত্রিত হবে ।”
সূরা আল আনআম ৭২
দুনিয়ার সমস্ত কর্ম ব্যস্ততা টেনশান দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার এক অনুপম ইবাদত হলো নামাজ । শান্তি প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল হলো নামাজ । রুকু সিজদা তাকবীরের মধ্যে দিয়ে আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা সহকারে মগ্ন হওয়ার নাম নামাজ । আর এ কারণেই নামাজের মধ্যে গভীর মনোযোগ দেয়া অতীব জরুরী বিষয় ।
আর এ কারণেই মহানবী সাঃ বলেছেন “ ইয়া বেলাল ! নামাজের ইক্বামত শুরু করো এবং এই নামাজের মাধ্যমে আমাকে শান্তিময় করতে সাহায্য করো ।”
সুনানে আবু দাউদ ৪৯৮৫
প্রিয় রাসুল সাঃ বলেছেন “ নামাজকে আমার জন্য চক্ষু শীতলকারী বানিয়ে দেয়া হয়েছে ।”
মুসনাদে আহমদ ১২২৯৩
নামাজের স্বাদ মনযোগ প্রদানের মধ্যে । যখন মোয়াজ্জিন আল্লাহু আকবর বলে ডাক দেয়, হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হয় । মোয়াজ্জিন যখন হাইয়ে আলাস সালাহ / ফালাহ বলে আওয়াজ করে, তখন দুনিয়ার সবকিছুর সংগে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে নামাজের প্রতি মনোনিবেশ করে একজন মুসলিম ।
মহানবী সাঃ আযান শোনা মাত্রই উঠে দাঁড়াতেন ।”
ارشاد الساري لشرح صحيح البخاري ٥٣٢/٥
নবীজী সাঃ বলেন “ যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে, তার দেহ থেকে গুনাহ সমূহ বেরিয়ে যায় । এমনকি তার নখের নীচ থেকেও গুনাহ বেরিয়ে আসে ।”
ছহীহ মুসলিম ২৪৫
ওযু শেষে যে ব্যক্তি পাঠ করে “ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকালাহ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদান আবদুহু ওয়া রসুলুহ এবং দোয়া করে ইয়া আল্লাহ ! আমাকে তাওবা কারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্র লোকদের মধ্যে শামিল করুন । তখন তার জন্য জান্নাতের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় এবং তাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ করো ।”
ছহীহ মুসলিম ২৩৪
মসজিদে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাকে প্রবেশ করবেন । সুগন্ধি ব্যবহার করবেন ।
আল্লাহ বলেন “ হে আদম সন্তান ! মসজিদ সমূহে তোমাদের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাও ।”
সূরা আল আ’রাফ ৩১
দূর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবেনা । কারণ দূর্গন্ধে মানুষের যেমন কষ্ট হয়, ফিরিশ্তারাও কষ্ট পায় ।”
বলেছেন বিশ্বনবী সাঃ ।
ছহীহ মুসলিম ৫৬৪
নামাজের দ্বারা মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া উচিত । মন্দ থেকে উত্তমের দিকে ফিরে আসা ।
সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাঃ’র ছেলে আলী রাঃ ওযু করার পর তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটতো । এ বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন তোমরা কি বুঝতে পারছোনা যে আমি কার জন্য দাঁড়ালাম এবং কার কাছে মুক্তি চাইছি ?
আল্লাহ দেখে থাকেন কে নামাজে দাঁড়ায় আর কে সিজদায় ।
আল্লাহ বলেন “ যখন আপনি দাঁড়ান তিনি আপনার প্রতি তাকান এবং সিজদায় আপনার উঠা বসা লক্ষ্য করেন ।”
সূরা আশ শুয়ারা ২১৮-২১৯
নামাজ পড়বেন অত্যন্ত মনযোগ সহকারে । নামাজ থেকে উদাসীন হবেন না । মহানবী সাঃ সতর্ক করে বলেন “ নামাজের মধ্যে অমনযোগীতা ! সঠিকভাবে রোকন ইত্যাদি আদায় না করার কারণে ছওয়াব এক দশমাংশ ! এমনকি অর্ধেক পর্যন্ত কম করে দেয়া হয় ।”
সুনানে আবু দাউদ ৭৯৬
নবীজী সাঃ বলেন “ যে ব্যক্তি মনযোগ সহকারে নামাজ পড়ে, তার রব তাকে মুক্তি দান করবেন ।”
ছহীহুল বোখারি ৫০৮
অত্যন্ত গভীর মনযোগ দাও নামাজের মধ্যে ।”
ছহীহ মুসলিম ৬০২
বান্দা যখন বলে “ আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, জবাবে আল্লাহ বলেন ‘ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে ।
বান্দা যখন বলে আর রহমানির রহিম, জবাবে আল্লাহ বলেন ‘ বান্দা আমার প্রশংসায় রত ।
বান্দা যখন বলে মালিকি ইয়াও মিদ্দিন , আল্লাহ বলেন বান্দা আমার বড়ত্ব প্রকাশ করেছে ।
বান্দা যখন বলে ‘ ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন, আল্লাহ বলেন ‘ এখানে আমার ও বান্দা দু’জনের বিষয় রয়েছে । অর্থাৎ বান্দা আমার সাহায্য কামনা করছে এবং একমাত্র আমার ইবাদত করছে ।
বান্দা যখন বলে ‘ ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাক্বীম আয়াতের শেষাংশ পর্যন্ত, আল্লাহ বলেন ‘ বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা করছে ।”
ছহীহ মুসলিম ৩৯৫
বান্দা যখন নামাজের রুকুতে পাঠ করে সুবহানা রব্বিআল আজীম “ আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করে ।
সামিআল্লাহু … বলার পর রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময়ে বলবে “ আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হাম্দ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আর্দ ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা’দ “
ছহীহ মুসলিম ৪৭৭
প্রিয় নবী করিম সাঃ বলেছেন “ ইমাম যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে তোমরা বলো রব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ । তোমাদের বলাটা যদি ফিরিশ্তাদের বলার সাথে মিলে যায় তোমাদের বিগত সময়ের সমস্ত ( ছগীরা ) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ।”
ছহীহুল বোখারি
ছহীহ মুসলিম
আল্লাহ বলেন “ সিজদা করো এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হও ।”
সূরা আল আলাক্ব ১৯
বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে সিজদায় । সুতরাং সেখানে দোয়া বৃদ্ধি করো ।”
ছহীহ মুসলিম ৪৮২
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে । যদি নামাজ যথাযথভাবে হয়, মুক্তি পেলো । পক্ষান্তরে যদি গরমিল হয়, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । ফরজ পালনে কমতি থাকলে আল্লাহ বলবেন আমার বান্দার আমলনামায় নফল ইবাদত আছে কিনা দেখো । যদ্ধারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা যায় ।”
সুনানে আবু দাউদ ৮৬৪
প্রিয় ভাই ও বোনেরা ! নামাজী হোন আজ এবং এখনই । মনযোগ সহকারে নামাজ পড়বেন । খোৎবায় যা শুনেন তার উপর আমল করুন ।
ইয়া আল্লাহ ! আমাদেরকে নামাজী বানিয়ে দিন । আমাদের মা বাবাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন । আমিন ।
Discussion about this post