যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় সময় রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয় এ তৎপরতা। অভিযানে অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থা। এরই মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খবর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এ তথ্য জানিয়েছে। রোববার শুরু হওয়া এই অভিযানে আইসিইর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইশারায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন টম হোম্যান। তিনি আইসিইর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
ওই সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আইসিই লিখেছে, রোববার দেশজুড়ে ৯৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শিকাগোয় এই ‘বাড়তি অভিযান’ ছাড়াও আটলান্টা, পুয়ের্তো রিকো, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন ও টেক্সাস শহরে অভিবাসনসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আইসিইর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিদিন ৭৫ জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতিদিন গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়বে। গত অর্থবছরে আইসিইর অভিযানে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে প্রতিদিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার তথ্য অস্বীকার করেছেন টম হোম্যান।
অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছে না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে। সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।
দেশজুড়ে অভিযান–ধরপাকড়
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ওয়াল্টার ভালাদারেস নামের ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইসিইর সদস্যরা। তিনি হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর বৈধ কোনো নথিপত্র নেই। সিএনএনকে ওয়াল্টারের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াল্টারের ভাই এডউইন ভালদারেস বলেন, ওয়াল্টার নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আটলান্টার উপকণ্ঠে লিলবার্ন এলাকায় ৪ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। ওয়াল্টারের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই। একবার শুধু লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সে ঘটনায় জরিমানাও পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আটলান্টার উপকণ্ঠে টাকার এলাকা থেকে নথিপত্রহীন আরেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একটি গির্জায় ছিলেন। ওই গির্জার যাজক লুইস ওরতিজ সিএনএনকে বলেন, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে তিনি দেখতে পান গির্জার কয়েকজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেন আইসিই সদস্যরা।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে। এই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু শহরের অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করেছেন ডিইএ ও আইসিই সদস্যরা। ডিইএ জানিয়েছে, রোববার সকালে কলোরাডোয় মাদক চোরাচালানিদের এবং ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো অভিযানে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
Discussion about this post