স্ত্রীর গায়ের রঙ ফর্সা না হওয়ায়’ তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেন স্বামী । ২০১৭ সালের ২৪ জুন ভারতের উদয়পুরের বল্লভনগরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৮ বছর পর অবশেষে সেই স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। শনিবার (৩০ আগস্ট) উদয়পুরের মাভলির নিম্ন আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই সঙ্গে আসামিকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
আদালতে উপস্থাপিত নথি থেকে জানা গেছে, নিহত স্ত্রী লক্ষ্মী মৃত্যুর আগে দেওয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী কিষানদাস তার গায়ের রঙ নিয়ে কটূক্তি করতেন। প্রায়ই তিনি তাকে ‘কালি’ বলে অপমান করতেন। ঘটনার দিন কিষানদাস একটি প্লাস্টিক বোতলে বাদামি রঙের তরল পদার্থ নিয়ে আসেন এবং দাবি করেন এটি নাকি ফর্সা হওয়ার ওষুধ।এক পর্যায়ে তিনি তরলটি স্ত্রীর শরীরে মাখিয়ে দেন। এ সময় গন্ধে তরলটিকে এসিড মনে হওয়ায় লক্ষ্মী আপত্তি করলে কিষানদাস আগরবাতি দিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে স্ত্রী যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সাহায্য চাইলে সেখানে থেকে পালিয়ে যান কৃষ্ণলাল। ঘটনার খবর পেয়ে লক্ষ্মীর শ্বশুর এবং শাশুড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেই কয়েক দিন পরে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় লক্ষ্মীর বাপের বাড়ির লোকজন বল্লভগর পুলিশ স্টেশনে কৃষ্ণলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের কিছুদিন পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবেশেষে দীর্ঘ আট বছর পর গত শনিবার বল্লভনগরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।উদয়পুরের জেলা ও দায়রা জজ রাহুল চৌধুরী রায়ে বলেন, এই হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বিরলতম অপরাধের মধ্যে পড়ে। তার ভাষায়, ‘এটি শুধু লক্ষ্মীর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে তিনি স্ত্রীর বিশ্বাস ভেঙেছেন। যে সমাজে আমরা বাস করি সেখানে এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দিনেশ পালিওয়াল এই রায়কে ঐতিহাসিক রায় অভিহিত করে বলেন, ‘একজন তরুণী নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। তিনি কারও মেয়ে, কারও বোন ছিলেন। যদি আমরা আমাদের মেয়েদের বাঁচাতে না পারি, তবে কে বাঁচাবে?’
তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী সুরেন্দ্র কুমার মেনারিয়া দাবি করেছেন, এটি একটি দুর্ঘটনা এবং তার মক্কেল নির্দোষ। তিনি জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
Discussion about this post