ভারতের উদ্দেশে ‘বাংলাদেশের তরকারিতে লবণ দিতে আসবেন না’ বলে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর তাদের বিজয় বলে দাবি করেছেন। সেখানে তিনি একটিবারও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেননি। প্রতিবেশী দেশ প্রতিবেশীর মতো থাকুক। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশের তরকারিতে লবণ দিতে আসে। আমাদের তরকারিতে আমরাই লবণ দেবো।’
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জেলা স্কুল বড় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে যে দল সংখ্যালঘু বলে ফায়দা লুটে নিয়েছে। তারাই তাদের ক্ষতি করেছে, তাদের সম্পদ লুটে নিয়েছে, বাড়ি ঘর দখল করেছে, নির্যাতন করেছে। তারা এসব করে ইসলামপন্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ইসলামপন্থীরা এসব করে না, অন্যের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে না, অন্যকে নির্যাতন করে না। আমরা জাতিসঙ্ঘের কাছে দাবি জানিয়েছি, বাংলাদেশে যত এরকম ঘটনা ঘটেছে তার সকল ঘটনার তদন্ত করা হোক। তাতে যারা অপরাধী হবে তাদের বিচার হোক। তারা কারা দেখতে চাই, কারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের বিপ্লবের পর চার দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। ইসলামপন্থীরা চার দিন সারাদেশে পাহারা দিয়েছে। দুর্গাপূজায় গণ্ডগোল করতে চেয়েছিল। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের পূজায় পাহারা দিয়েছি। আমরা চাই না কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারা দেয়া হোক, মসজিদে পাহারা দেয়া না লাগলে মন্দিরেও যাতে পাহারা দিতে না হয়- এমন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চাই।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। ছোট এই বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ। কিন্তু জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। তাদের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করতে পারলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।’
জামায়াতের ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুন, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের সাড়ে ১৫ বছর পর মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। এই সাড়ে ১৫ বছরে অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, অনেকের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। জামায়াতে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদেও ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কুরআনের পাকি আল্লামা সাঈদীকেও মৃত্যুও দিকে ঠেলে দেয়া হলো। তার নামাজে জানাজায় যেন মানুষ না আসতে পারে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করার পরও বৃষ্টির মধ্যে মানুষ জানাজায় অংশ নিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর- স্লোগান নিয়ে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল। তারা বুক পেতে খোলা অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। এক মন্ত্রীকে পুলিশ বলেছিল, একটি গুলি করি একজন মরে আর চারজন দাঁড়িয়ে যায়। এমন জাতি তৈরি হয়েছে, এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
ভবিষ্যতেও যাতে জাতির জন্য এমন ছেলেরা দাঁড়িয়ে যায় সে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মরা বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ছাত্রদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়, কিন্তু চাকরি দেয়া হয় না। ছোট একটি দাবির জন্য রাস্তায় নেমেছিল, কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হলো। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়েছে, চোখ হারিয়ে কাতরাচ্ছে। তাদের এক অধিকারের সাথে সকল অধিকার এক হয়ে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’
আমিরে জামায়াত বিগত তিনটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নিয়েছিল। আর ২০১৮ সালে নির্বাচন রাতের বেলায় করেছে এবং ২০২৪-এর ভোট হয়েছে আমি আর ডামি। সরকার ছিল ডামি সরকার। এ জন্য স্রোতেই চলে গেছে। তারা আবার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা আত্মস্বীকৃত খুনি, খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই, এ চ্যাপ্টার ক্লোজড। শ্রীলঙ্কার সরকারও পালিয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, আসবে না। মানুষকে বোকা ভাববেন না। দেশটাকে এখন গড়তে হবে। আমরা চাই সবাই মিলে দেশ গড়তে। তবে যারা লুণ্ঠন করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলা গুরুত্বপূর্ণ জেলা, কিন্তু অবহেলিত। এখানে মেডিক্যাল কলেজ নেই, বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, এ জেলার দিকে নজর দিন। অন্তত একটি মেডিক্যাল কলেজ দিয়ে শুরু করুন। আমরা চাই, সকল জেলায় সমান উন্নয়ন হবে। আমরা চাই আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সকল জেলায় সমান উন্নয়ন হবে। ইনসাফের ভিত্তিতে দেশ হলে দেশ বিশ্বে একটি রোল মডেলে পরিণত হবে। এমন বাংলাদেশ চাই, এমন বাংলাদেশে আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, নারী-শিশু সবাই সম্মানের সাথে বাস করবে।’
এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। আগামী নতুন বাংলাদেশ গড়তে চেষ্টা চালাতে হবে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, ঘুষ মুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত সাম্যের দেশ গড়তে চাই। এ জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য আপনাদের দোয়া চাই, আপনাদের পাশে চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, আমরা অন্যায় করলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহর হুকুম থাকলে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
এ জন্য তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর সহযোগিতা চান।
Discussion about this post