কিশোরগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে আওয়ামী ঘরানার মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সাফাতের বাবা ও বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার ইদ্রিস আলী ভূইয়া, কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জাকিয়া নূর লিপির একান্ত সহচর সাবেক জেলা কমান্ডার এ বি সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ইদ্রিস আলী ভূঁইয়াসহ কয়েকজন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম, সাবেক জেলা কমাণ্ডার মিজানুর রহমান খান, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমাণ্ডার মাহবুব আলম, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূইয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ভূইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সময়ে যাদের দাপটের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেতো তাদের অনেককেই এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাপটের সাথেই অংশ নিতে দেখা যায়। তারা বক্তব্যও দেন। আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদের মধ্যে কয়েকজনের সরব উপস্থিতি এবং বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে ইদ্রিস আলী বক্তব্য শেষ করার সময় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন জেলা প্রশাসককে আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার লোকজনকে যেন না রাখা হয়। কিন্তু সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে তা মেনে নেয়ার মতো নয়। আমরা মনে করি, জেলা প্রশাসকের ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’
এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘আজকে কিশোরগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২০২৪-এর শহীদ ভাইদের সাথে এটি প্রতারণা। আমরা মনে করি, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তারা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ এবং পদোন্নতি পেয়েছে। প্রশাসনের অনেকে এখনো মনে করে যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। এজন্য এমনটা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ‘আমরা তালিকাভুক্ত সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। বক্তব্যে কে বা কারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়েছে আমি তা লক্ষ্য করিনি। এছাড়া অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কারা বক্তব্য দেবেন এটাও আমি নির্ধারণ করিনি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাই এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
Discussion about this post