আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ পাঁচ বছরে সারা দেশে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ খুনের শিকার হয়েছে। গড়ে প্রতি বছর খুন হয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৯টির বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
দেশে চুরি-ছিনতাই, ডাকাতির অধিকাংশ ঘটনায় ভোক্তভোগিরা অভিযোগ করেন নি, তারপরেও পুলিশের খাতায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৫ বছরে প্রায় ৬৭ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ৯ টির বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা অপরাধ পরিসংখ্যানে এই তথ্য এসেছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় বন্ধ রাখার পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।নতুন সরকারের আমলে এসব পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে পরিস্থিতির উন্নতি চায় পুলিশ সদর দপ্তর। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক অপরাধ কমাতে বিশ্বের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন দরকার। প্রয়োজন প্রচুর কর্মসংস্থান।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৬ হাজার ৫৫৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই হিসাবটা এসেছে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা থেকে। সাধারণত জোড়া খুন বা একসঙ্গে ততোধিক খুনের ঘটনায় একটি মামলা হয়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরে গড়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৩১১টি। এমনকি করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালেও সাড়ে তিন হাজার খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এই পাঁচ বছরে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৯ হাজার ৯৫৫টি আর ডাকাতির মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, ছিনতাই ও ডাকাতির প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি হবে। কারণ, বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করেন না, অনেকে এটাকে আরেক ভোগান্তি মনে করেন। ডাকাতির ঘটনায়ও পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিতে চায় না। ডাকাতির মামলা চুরি হিসেবে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের এই পাঁচ বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৪৫২টি। আর চুরির অভিযোগে প্রায় ৫৫ হাজার মামলা হয়েছে।
মামলার সংখ্যার ভিত্তিতে দেশের অপরাধ পরিসংখ্যান নিয়মিত পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ‘গায়েবি মামলা’ করে তৎকালীন সরকার। ঘটনা না ঘটলেও পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে এসব মামলা হয়।
নবনিযুক্ত আইজিপি বাহারুল আলম গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ওয়েবসাইটে অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন সাংবাদিকেরা। এরপর আইজিপির নির্দেশে একসঙ্গে পাঁচ বছর আট মাসের (২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত) তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের (২০১৯-২০২৩) পাঁচ বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের উপরিউক্ত তথ্য পাওয়া যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনাও উদ্বেগজনক পর্যায়ে ছিল। ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়। ওই পাঁচ বছরে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১২৪টি।
আর মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ৩ লাখ ১৫ হাজারের বেশি, চোরাচালানের অভিযোগে প্রায় ১৪ হাজার এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৯ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে।
২০২৪-এর প্রথম ছয় মাসের চিত্র
আওয়ামী লীগ সরকারে চতুর্থ মেয়াদ শুরু হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। জুলাই আন্দোলনের আগপর্যন্ত এ বছরের প্রথম ছয় মাসেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুন হয়েছে ১ হাজার ৫৩৩টি। একই সময়ে ১৮৩টি ডাকাতি, ১ হাজার ২২২টি ছিনতাই-দস্যুতা ও ২৮১টি অপহরণের ঘটনা ঘটে।
এই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ৯ হাজার, মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ৩৩ হাজার, চোরাচালানের অভিযোগে প্রায় ১৫ হাজার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে।
Discussion about this post