ফেসবুকে পোস্ট করার পর খলিলের পরিচয় মিললেও লাশ নিতে কেউ রাজি নয়। তাই বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঢাকার গাজীপুরে আগামীকাল দাফন হবে খলিল। খলিলের ব্যাপারে যতই জানছি ততই অবাক হচ্ছি। নিয়তি বড়ই নির্মম, টাকা না থাকলে আপন সব পর হয়ে যায়, খলিল এই ঘটনার জলন্ত উদাহরণ। যা জানা গেল খলিলের ব্যাপারে।
খলিলের পুরো নাম ইব্রাহিম খলিলুর রহমান । মৃত্যুকালে খলিলের বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তার বাবার নাম আব্দুল লতিফ, মায়ের নাম নুরজাহান বেগম। তার গ্রামের বাড়ি সোনাগাজী উপজেলার আহমেদপুর। হতভাগার সবাই আছে কিন্তু কেউ আজ তাকে নিতে রাজি নয়, খোদ খলিলের লাশটি নিজের মাতৃ ভূমি আপন গ্রামের সমাহিত হবে না।
লা*শ আনতেও কেউ রাজি নয়। তাই বেয়ারিশ লাশ হিসাবে ঢাকার গাজীপুরে সমাহিত হবে । আহ ঘটনা কত কষ্টের বলে বুঝাতে পারবো না। খলিল প্রথম জীবনে তিনি সৌদি প্রবাসী ছিলেন। বিয়ে করেছেন স্ত্রী, দুই মেয়ে এক ছেলে আছে। জীবনে প্রথম অবস্থায় বন্ধুদের সাথে আমদানি রপ্তানি ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে কিউট কোম্পানির পণ্য বিক্রি করতেন সৌদিতে। স্ত্রীর নামে ফেনী শহরে দুই শতাংশ জমি কিনে দিয়েছেন। ব্যবসার যখন খুব জোয়ার চলছিল বন্ধুরা তার সাথে প্রতারণা করে। এক সময় খলিল ফেনীতে চলে আসে। পুনরায় পাসপোর্ট তৈরি করে কাতারে চলে যান।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ধীরে ধীরে তার আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেল। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেল। স্ত্রী ছেলে তাকে ছেড়ে চলে গেল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। ফেনী শহরের কোথাও তাদের না পেয়ে ফেনী মডেল থানা একসময় খলিল সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু কেউ আর ফিরে আসলো না, আসলো না ছেলেমেয়ে কেউ।
যাদের জন্য সব কিছু করলেন তারা এখন আর খলিলের খবর নেন না। রাগে-ঘৃণায় ফেনী ছেড়ে গাজীপুরে চলে যান। সেখানে আবাসিক হোটেলে থাকতেন। খাওয়া দাওয়া করতেন তাজু ভাইয়ের হোটেলে। মাঝেমধ্যে ছোট ভাইয়ের নুরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করতেন। টাকা ধার নিয়ে হোটেলে খেতেন।
যখন টাকা ধার পেতেন না তখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে খাবার খেতেন। এক পর্যায় গত ১৬ নভেম্বর প্রচন্ড বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। হার্টের সমস্যা জনিত কারণে রোগ আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল ৮ টায় তিনি মারা যান।
মারা যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্টের সূত্র ধরে জানা যায়। তার ছোট ভাই নুরুল ইসলাম প্রবাস ফেরত। তিনি জানালেন তিনিও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় অসুস্থ জীবন যাপন করছেন।
তবে আইনি জটিলতার কারণে তিনি ও তার ভাইয়ের লাশ আনতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। হায়রে বিধাতার নির্মম পরিহাস ।
Discussion about this post