গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মো. ইসরাফিল (২৪)। কারও সাতে-পাঁচে না থাকা এই যুবক প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের কর্মস্থলে চলে যান। সারা দিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসেন ঘরে। এমনভাবে দিন চলতে থাকলেও গত ১৩ সেপ্টেম্বর তার জীবনে আসে এক বিভীষিকাময় সকাল। সেদিন সকাল ৭টায় তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হাসান লিটন এবং তার লোকজন। এরপর মসজিদের মাইকের ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে স্থানীয় এক স্কুল মাঠে নিয়ে তাকে ২ ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে পেটানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ইসরাফিল।
ভুক্তভোগীর পরিবার এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিটন বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ইসরাফিলের ওপর অনেকদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে এতদিন কিছু না বলতে পারলেও বর্তমানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে ইসরাফিলের ওপর এই অমানবিক নির্যাতন চালান তিনি।
ইসরাফিলের বাবা মো. নাসির বলেন, ‘গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে আমার ছেলের সঙ্গে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে যায় লিটন এবং তার লোকজন। আমার ছেলেকে বলে সে নাকি মসজিদের মাইকের ব্যাটারি চুরি করেছে। আমার ছেলে তাদের বলে যে, আমি সারা দিন রাজমিস্ত্রির কাজ করি। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে শুয়ে থাকি। আমি তো মসজিদের দিকে যাইনি। এরপর আমার ছেলেকে নিয়ে তারা শৈলাট মেডিকেল মোড় স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমার ছেলেকে হাত-পা বেঁধে রড এবং লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম পানি ঢেলে দেয়। আমার ছেলের দুই পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ফোসকা পড়ে গেছে। লিটন লোহার রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে আমার ছেলের দুই পা ভেঙে ফেলে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গেলে লিটন, বাবুল মণ্ডল এবং শফিকুল ইসলাম আমাকেও মারধর করে। তারা আমার ছেলের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং আমার কাছ থেকে জোর করে একটি নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। তারা বলে আমরা যদি পুলিশের কাছে যাই, তাহলে আমাকে এবং আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে।’
মো. নাসির কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলেটা বাঁচবে কি না, জানি না। প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে দুই দিন রাখার পর অবস্থা খারাপ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে নিয়ে এসে বর্তমানে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করাচ্ছি। ছেলের গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে, পায়ের মধ্যে পুঁজ হয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ, কৃষিকাজ করে খাই। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকাও নাই। কীভাবে কী করব জানি না। শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা করেছি। এখন ছেলের জীবন বাঁচানোর পর আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দৌড়াতে পারব। পুলিশ যেন ওদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে এটাই আমার চাওয়া।’
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা কামরুল হাসান লিটন বলেন, ‘আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। বিষয়টি এলাকার নেতারা জানেন। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। এলাকায় একটা ঘটনা ঘটলে অনেকের নাম বলা হয়। কেউ হয়তো আমার নাম বলেছে। কিন্তু আমি এ বিষয়ে জানি না।’
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি জয়নাল আবেদিন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post