প্রতি মুহূর্তে উচ্চ প্রশিক্ষিত রক্ষীদের একটি সম্পূর্ণ বাহিনীর পাহারায় থাকেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক অর্থে কঠোর নিরাপত্তার বেড়াজালে তার জীবন ঘেরা। তার নিরাপত্তা দলটির সদস্যরা ‘মাস্কেটিয়ার’ নামে পরিচিত। জানা যায়, এই মস্কেটিয়াররা রাশিয়ার ফেডারেল প্রটেকটিভ সার্ভিসের একটি বিশেষ ইউনিটের সদস্য।
বলা হয়, ‘চেগেট’ নামে একধরনের ব্রিফকেস সঙ্গে রাখতে পছন্দ করেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই নেতা।তবে এই ব্রিফকেস সাধারণ ব্রিফকেস নয়। চেগেটের আগের সংস্করণটি ছিল ভয়ানক, যা বিস্ফোরিত হলে আধা মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখত। তবে এখন চেগেট ব্যবহৃত হয় যোগাযোগের যন্ত্র হিসেবে। যার একটি বোতাম চাপলেই মস্কেটিয়াররা বুঝে যায়, পারমাণবিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে হবে দ্রুততম সময়ে।
কয়েকটি বিশেষ গুণকে পুতিনের দেহরক্ষী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘অপারেশনাল সাইকোলজি’ ছাড়াও চরম শারীরিক ও মানসিক শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়। যে কোনো আবহাওয়া সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয় দেহরক্ষীদের।ভ্রমণের কয়েক মাস আগে থেকেই পুতিনের এজেন্টরা তার গন্তব্যস্থলের খোঁজ নিতে শুরু করেন। তাদের কাছে থাকে এসআর-১ ভেক্টর পিস্তল। বুলেটপ্রুফ ভেস্টও ভেদ করতে পারে এই পিস্তলের বুলেট।রিমোটলি বা দূরে থেকে বোমা বিস্ফোরণ রোধ করার জন্য বসানো হয় জ্যামিং ডিভাইস। দক্ষ প্রযুক্তিবিদেরা চালান ইলেকট্রনিক নজরদারি। পুতিনের ভারী সাঁজোয়া যানের বহরে থাকে একে-৪৭, অ্যান্টি-ট্যাংক গ্রেনেড লঞ্চার এবং পোর্টেবল অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল। বর্তমানে পুতিন ব্যবহার করেন রাশিয়ায় অরাস মোটরসের তৈরি বিলাসবহুল গাড়ি ‘অরাস সিনেট’।
পুতিনের খাবারও একাধিক নিরাপত্তার ছাঁকনি পেরিয়ে টেবিলে আসে। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাই আগে খাবার মুখে নিয়ে পরীক্ষা করেন। অবশ্য এ যুগে খাবার চেখে দেখে পরীক্ষা করার দরকার পড়ে না। কারণ, পুরো খাবার তৈরির প্রক্রিয়াতেই নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যুক্ত থাকেন। তাই শত্রুপক্ষের বিষ রান্নাঘরে পৌঁছানোর আশঙ্কা প্রায় শূন্যের ঘরে।
এর পরও যেহেতু কথায় আছে, সাবধানের মার নেই; তাই রান্না শেষে টেবিলে আসার আগেই সেটা অন্যরা খেয়ে পরীক্ষা করেন। দেশের বাইরে গেলে প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষভাবে বহন করা হয় লবণ, গোলমরিচ, টমেটোর সস, পানির বোতল ও ন্যাপকিন।
পুতিনের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা বহন করেন বিশেষ ধরনের স্যুটকেস। প্রেসিডেন্টের ওপর গুলি চললে এই স্যুটকেস বুলেটপ্রুফ ঢাল হিসেবে সুরক্ষা দেবে। তবে এটাই মূল কাজ নয়। স্যুটকেসগুলোর মধ্যে একটির নাম ‘পু স্যুটকেস’।
ভিনদেশে থাকার সময় প্রেসিডেন্টের মলমূত্র সংগ্রহ করে রাশিয়ার মস্কোয় ফেরত নেওয়ার জন্যই এটি ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয়, প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থার কোনো তথ্য যাতে বাইরে প্রকাশ না পায়, তাই এমনটা করা হয়।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
Discussion about this post