‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’- স্লোগাননামার ব্যাখ্য দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কটূক্তি করার প্রেক্ষাপটে গত ১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘তুমি কে? আমি কে?, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। ওই সময় অনেকেই এর সমালোচনা করলেও পরে এই স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনের গতির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
ব্যাপকভাবে আলোচিত ওই স্লোগানের গতকাল দু’মাস পূর্ণ হয়েছে। স্লোগানটিকে স্মরণ করে গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্লোগাননামা শিরোনামে একটি পোস্ট দেন নাহিদ ইসলাম।
এতে তিনি বলেন, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’- এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান ছিল। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি ছিল তা এই স্লোগানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছিল সেই রাতে। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ সেই রাতেই ভেঙে গেছিল। অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে আরো কয়েকটা দিন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল কেবল।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ইতিহাস তো একরোখা কোনো বিষয় না। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’; ‘আমি নই, তুমি নও; রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানও সেই রাতে বহুবার দেয়া হয়েছে। আন্দোলনে বহুস্রোত ও কণ্ঠস্বর এসে মিলেছে। সবাই সবসময় এক বক্তব্য ধারণ করেছে এ রকম নয়। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ীও বক্তব্য-কর্মকৌশল বদল হয়েছে বহুবার। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগানও হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র পক্ষেও বহু গুণগান গাওয়া হয়েছে একসময়। ১৮ সালেও হাসিনা ও মুজিবের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। পরে বুকে রাজাকার লিখে সেই আন্দোলন গতি পেয়েছে। একটা আন্দোলনে অনেক ডাইমেনশন থাকে এবং বহু পরস্পর বিরোধী ঘটনাও একসাথে ঘটতে পারে। এই সামগ্রিকতাকে ধারণ করেই প্রকৃত ইতিহাস রচিত হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, রাজাকার ইস্যুটিকে পরিকল্পিতভাবে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তার ফলেই পরদিন মিছিলে হামলা করা হয়। আর এ আন্দোলনে যেহেতু নারী শিক্ষার্থীরা ছিল মূল শক্তি, তাই মেয়েদের ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়। তারপরের ঘটনা সবাই জানেন। ফ্যাসিস্টদের শেষ রক্ষা হয়নি। ১৫ তারিখ সকালে আমাকে বহু মিডিয়া ফেস করতে হয়েছে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে। আমার ব্যাখ্যাটি ছিল অনেকটা এ রকম- রাজাকার শব্দের কোনো প্রাসঙ্গিকতা এই আন্দোলনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাজাকার ইস্যুর অবতারণা করেছেন এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন। প্রতি উত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে রাজাকার বলে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বিদ্রুপ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের ট্যাগ দিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধে এবার সর্বাত্মক আন্দোলনে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তারা হলে হলে আজ সোমবার গণসংযোগ করবেন।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-এ লিডারশিপ বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন কর্মসূচি পালন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার হলে হলে জনমত তৈরিতে গণসংযোগ এবং পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবো। ওই দিন ক্যাম্পাস-জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে না নেয়া হচ্ছে, লাগাতার কর্মসূচি এভাবেই চলতে থাকবে।
এ দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থা কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সেখানে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ আসেন তাদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীরা গতকালের মতো অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন।
Discussion about this post