সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বামীর প্রায় ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা দেশে ফিরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বামীর নাম সোহরাব।
এনিয়ে দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পাশাপাশি দুবাই পুলিশেও অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ওই ভুক্তভোগী স্বামী।
অভিযোগ আছে, আগেও একাধিক বিয়ে করেছিলেন তানিয়া। কিন্তু সেই তথ্য তিনি সোহরাবের কাছে গোপন রাখেন।
দুবাইয়ে সোহরাবের নিকটজনদের সূত্রে এক গণমাধ্যম জানান, প্রায় দেড় বছর আগে তানিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সোহরাব। দুবাইয়ের কারামা এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করার সুবাদে তানিয়ার সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে। এক পর্যায়ে দু’জনের পরিবারের অসম্মতিতে দুবাইতে তাদের বিয়ে হয় এবং সেখানেই সংসার করতে থাকেন। তানিয়ার বাবাও দুবাইতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বিয়ের পর বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যে তানিয়াকে সম্পৃক্ত করেন সোহরাব। বিয়ের এক বছর পর তানিয়া অন্তঃসত্ত্বা হন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক চলছিলো। কিন্তু ঘটনা উল্টো দিকে মোড় নেয় গত ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে।
সোহরাবের অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তানিয়া উশৃঙ্খল চলাফেরা, টিকটক-লাইকি ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লে শ্বশুরের কাছে বিচার দেন তিনি। এতে তানিয়ার সাথে সোহরাবের কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তিনি দেশে ফেরার পর তানিয়া তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কোনোভাবেই স্ত্রীকে না পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে গত ১৭ এপ্রিল তাকে আশ্রয় দানকারী রেখা আকতারের কাছে ফোন দিলে রেখা সোহরাবকে জানান, তার স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহরাব।
সোহরাব জানান, বাংলাদেশে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীর একাউন্টে তার বেশ কিছু টাকা ছিল। তাছাড়া সোহরাবের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লেনদেনও তানিয়ার একাউন্টে করতো; বিধায় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা তানিয়ার একাউন্টে জমা ছিলো। তাছাড়া দেশে যাওয়ার সময়, ঘরের লকারের চাবি, জমানো টাকা, স্বর্ণালঙ্কার সবকিছু স্ত্রীর কাছে রেখে গিয়েছিলেন তিনি
সোহরাবের অভিযোগ, টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তানিয়া তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। উপায় না দেখে বারবার শ্বশুরের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ থেকে। এই সময় ফিরোজ তাকে আশ্বস্ত করেন, তানিয়ার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন বলে। গত ২১ এপ্রিল সোহরাব জানতে পারেন, তানিয়া তার বাবার সাথে বাংলাদেশে ফিরেছেন। তানিয়া নিজেও ফোন করে সোহরাবকে বাংলাদেশে ফেরার খবর দেন।
সোহরাবের অভিযোগ, তানিয়ার ফুফুর বাসায় যাওয়ার পর সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় মাস্তান রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে আটক করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। সোহরাব টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা তাকে বেদম মারধর করে। এরপর পুলিশে ফোন দিয়ে সোহরাবকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
সোহরাবের দাবি, গত ২১ এপ্রিল আটক করার পর পুলিশ তাকে হত্যা, নারী নির্যাতন ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলার ভয় দেখায়। শেষ পর্যন্ত ভয় পেয়ে ২২ এপ্রিল ৭ লাখ টাকা দেন। সোহরাব থানায় আটক থাকায় তার এক নিকট আত্মীয়কে নিয়ে হাজিগঞ্জ থানার এসআই বেলাল হোসেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে থানায় নিয়ে আসেন এবং ওসি আব্দুর রাশিদের কাছে হস্তান্তর করেন। টাকা পাওয়ার পর তানিয়ার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে সোহরাবের কাছে থেকে সই করিয়ে নেন ওসি।
গত শুক্রবার বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাইতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সোহরাব তার ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বাংলাদেশ কনস্যুলেটে এই ঘটনার জন্য বিচার প্রার্থনা করেছেন।
দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বিষয়টি বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।
জেআই/