সেলিব্রেটিবিডি
এপার বাংলার সিনেমার ওপারে দেখা পাওয়া বেজায় মুশকিল। না বাণিজ্যিক, না ব্যতিক্রমী ধারার। ফিল্ম উৎসব-টুৎসবে তবুও দু’চারটে বাংলাদেশি ছবির দেখা মেলে। ক’দিন আগে ওপারের রাজধানীতে ব্যবসায়িকভাবেই মুক্তি পেল ওপারের ছবি ‘ভুবন মাঝি’। ফখরুল আরেফিন খানের এই ছবি মোটেই বাণিজ্যিক ধারার নয়, আবার আর্ট ফিল্মও বলতে পারছি না। আসলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রায় চল্লিশ বছর পর ‘মুক্তিযুদ্ধ লং মার্চ’-এর পটভূমিতে গল্পের বিস্তার। সকলেই জানেন মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক ফেনোমেনন। ওই ঘটনাকে প্রেক্ষাপট করে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিও হয়ে থাকে। ফখরুলের ছবি সেই পথে হাঁটেনি এটাই প্রশংসনীয়।
কিন্তু ছবিটা যে উতরোল না। একাত্তরের কৃষ্ণনগর, কলকাতা, কুষ্টিয়া, ঢাকা- বাংলাদেশের সঙ্গে দু’হাজার তেরো কিংবা চোদ্দর কুষ্টিয়া-ঢাকার ঘটনাকে তিনি মেলাতে পারেননি। অতীতের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হওয়া তরুণ নহির (পরমব্রত) আর তেরো সালের গায়ক আনন্দ সাঁই যে একই মানুষ, সেটা বুঝে উঠতে যেন কোটিপতি হওয়ার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় দর্শককে। প্রায় পাঁচ/সাত মিনিট অন্তর পিছিয়ে যাওয়া ও বর্তমানে ফিরে আসার ব্যাপারটার ততটুকু পরিষ্কার নয়। উলটে দর্শকের কাছে বিভ্রান্তির কারণ বান্ধবীর (অপর্ণা ঘোষ) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হল না বলেই কি বিবাগী হয়েছিল সাঁই? অস্পষ্ট সেটাও।
উপরন্তু একাত্তরের যুদ্ধকালীন দৃশ্যগুলোর উপস্থাপনাও অত্যন্ত শিশুসুলভ এবং অ্যামেচারিশ! কোনও প্রতিক্রিয়াই গড়ে ওঠে না। ফখরুলের আন্তরিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েও বলতে হচ্ছে চিত্রনাট্য যেমন এলোমেলো তেমনই তার নড়বড়ে চিত্রায়ণ। তাছাড়া ছবির নাম ‘ভুবন মাঝি’ কেন? নামটা কি শুধুই প্রতীকী? পৃথিবী-নৌকার মাঝিকেই কি উদ্দেশ্যে করতে চেয়েছেন? সেটাই অতিচেষ্টিত লাগে।
এই ছবির প্রধান সম্পদ কালিকাপ্রসাদের লেখা, সুর করা এবং গাওয়া গানগুলো। রবীন্দ্র গান ছাড়া দু’টি গানের কথা বলি। ‘আমি তোমারই তোমারই তোমারই নাম গাই’ আর ‘আমি বোতলে পুরেছি কান্না, আমি অনাহারে খুঁজি দম্ভ’- যেমন কথা, তেমনই সুর। গানের জন্যই ছবিটা আরেকবার দেখা যায়। পরমব্রতর অভিনয় প্রাণহীন চিত্রনাট্যের বলি। অপর্ণা ঘোষের অবস্থাও এক। একমাত্র কিছুটা মুখ রেখেছেন মিজান ভাই। ছবির পরিবেশকের কাছে একটাই নিবেদন- ওপার বাংলার ছবি আমদানির সময় কোয়ালিটির দিকে একটি যত্নবান ও সচেতন হবেন।
সেলিব্রেটিবিডি/এনজেটি
Discussion about this post