তিন মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় যাবে আবুধাবিতে। এরপর সেখানে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিটসহ ব্যবস্থা করে দেয়া হবে স্থায়ী ভিসার। এমন আশ্বাসে প্রবাসে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বেশ কয়েক যুবক। আবুধাবিতে ৪০ দিন জেল খেটে দেশে ফিরে এখন পথে বসেছেন তারা। সূত্রমতে, ১০ মাস আগে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মামুন আলী (২০), মমিনপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আমিনুল ইসলাম, একই উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে তৌহিদ আলীসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক।
প্রবাসে যাওয়া বাবদ ৩ লাখ টাকা ছাড়াও সেখানে তাদেরকে দিয়ে ৮ মাস নিজের কোম্পানিতে কাজ করিয়েও কোনো বেতন দেননি আবুধাবিতে থাকা প্রবাসী একেএম ফজলে বারী। কাজের অনুমোদন তো দূরের কথা, পুলিশের হাতে আটক হয়ে ৪০ দিন জেল খাটার পর দেশে ফিরেছেন তারা। একগুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে যাওয়া এসব যুবক দেশে ফিরে পড়েছেন আরও বিপদে। ধার-দেনা করে প্রবাসে যাওয়ায় এখন পাওনাদারদের টাকা কীভাবে শোধ করবেন এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। একেএম ফজলে বারী গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের সাহেবগ্রামের মো. মাহফুজুল হক পনি মিয়ার ছেলে। তিনি গ্রামের যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে বেশি টাকার বিনিময়ে বিদেশে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আবুধাবিতে ফিউচার গোল্ড লাইফ জেনারেল কনস্ট্রাক্টিং নামের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলে বারী।
সেই সুবাদে বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসার ব্যবস্থা করে সেখানে নিয়ে স্থায়ী ভিসা ও কাজ দেয়ার কথা বলে লোকজন নিয়ে যান তিনি। তার মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে আদালতে মামলা করেছেন দেশে ফিরে আসা শিবগঞ্জের কালুপুর গ্রামের মামুন আলী। তিনি বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে ফজলে বারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়ে তার মাধ্যমে আবুধাবিতে যাই। কথা ছিল, সেখানে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে বৈধভাবে কাজ করার অনুমোদন করে দেবে। কিন্তু ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ তিন মাস পেরিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ৮ মাস পার হয়ে গেলেও আর ভিসা হয়নি। যাওয়ার দুই মাস পর থেকে লুকিয়ে প্রায় ৬ মাস তার কোম্পানিতে কাজ করিয়েছে। সেই পারিশ্রমিকও দেয়নি। তিনি বলেন, গত বছরের ২০শে নভেম্বর সব টাকা পরিশোধ করার কথা বলে ১৯ নভেম্বর সেখান থেকে পালিয়ে যান ফজলে বারী। এরপর গত ৩০শে নভেম্বর সেখানকার পুলিশ আমাদেরকে আটক করে। ৪০ দিন জেল খেটে চলতি বছরের ৮ই জানুয়ারি দেশে ফিরেছি।
প্রতারণার শিকার তৌহিদ আলী বলেন, ধারদেনা ও বাড়ির বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। এতোসব বুঝি না। তাই এই ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বিদেশে দেখেছি আমাদের সঙ্গে আরও ৩০-৩৫ জন লোক ছিল। আমরা সবাই তার প্রতারণার শিকার হয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত একেএম ফজলে বারী মুঠোফোনে বলেন, আমি তাদেরকে বিদেশে নিয়ে যাইনি। তবে দেশ থেকে আসা অনেককে আমার কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম। টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় নিয়ে এসে প্রতারণার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু একাধিক কল রেকর্ডে তার সঙ্গে ভুক্তভোগী যুবকদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহম্মেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে এবং আদালত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কার্তিক চন্দ্র দেবনাথ জানান, ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। দেশ থেকে শ্রমিক ভিসা নিয়েই যেতে হবে বিদেশে। প্রতারণা করতে এমন ট্যুরিস্ট ভিসার আশ্রয় নেন অনেকেই।
মানবজমিন ০৯-০৩-২৩
Discussion about this post