সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই শহরের আল জেদ্দাফ নামক স্থানে গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। যার নাম মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটি দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুমের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
আল-খাইল হাইওয়ের পাশেই অন্যতম নান্দনিক শপিং মল ফেসটিবল সিটি, পাঁচতারকা হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ও ক্রাউন প্লাজার ঠিক মধ্যবর্তী স্হানে নোনা জলের দুবাই ক্রিক (নদী) যার গা ঘেঁষেই স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে এমবিআরএল। বুর্জ খলিফাসহ পার্শ্ববর্তী উঁচু টাওয়ারগুলো থেকে দেখলে মনে হবে কে যেন রেহেলের উপর সাজিয়ে রেখেছে বড় একটি বই; বইটি বার বার আপনাকে কাছে ডাকছে। ভেতর এবং বাইরের পরিবেশ এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে কেউ মুহুর্তেই মুগ্ধ হবেন। বিশেষ করে ১৭২ টি ভাষার সমন্বয়ে বাইরের লেংগুয়েজ গার্ডেন, ক্রিকের বোটগুলোর আনা-গোনায় নীলাভ জলরাশির ঢেউ, পাম গাছ আর বিভিন্ন প্রজাতির পাতাবাহার ফুলের সবুজের সমারোহে কয়েকটি ঝর্ণা সহজে নজর কেড়ে নেবেই। সবকিছু ভুলে গিয়ে ঝর্ণার পানির শাঁ শাঁ শব্দে মুগ্ধ হবেন বই ও প্রকৃতি প্রেমিরা।
দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম শেখের নিজেই লাইব্রেরিটি নির্মাণের উদ্যোগে নেন। চলতি বছরের ১৬ জুন এটি উন্মুক্ত করা হয়। ৫৪,০০০ বর্গমিটার জমির উপর স্হাপনাটি নির্মাণে খরচ হয় ১ বিলিয়ন দেরহাম। রেহেলের উপর দাড়িয়ে থাকা ৭ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরিটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি রোবট। রোবটের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ সহ অনায়াসে সেল্ফ থেকে বই কালেকশন করা সম্ভব।
মুহাম্মদ বিন রাশিদ নিজের একটি বাণীতে লিখেছেন, ‘অর্থনীতির জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন, রাজনীতির জন্য প্রজ্ঞার প্রয়োজন, জাতিকে শিখতে হবে এবং সে সবই বইয়ে পাওয়া যাবে।’
জ্ঞানের প্রতি আবেগকে উদ্দীপিত করাই হচ্ছে এই এই বাতিঘরটি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। তরুণ প্রজন্মকে শিখতে, বেড়ে উঠতে এবং ভবিষ্যৎ গঠনে সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করার জন্যই এটি প্রতিষ্ঠা। সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে দুবাইয়ের ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে সক্রিয়ভাবে পাঠ, সৃজনশীল লেখা ও আরবি ভাষায় কবিতা, সাহিত্য রচনা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে এই লাইব্রেরি। মূলত দুবাইয়ের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে এটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
লাইব্রেরির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আল-মুর মিডিয়া কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেন, ‘আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে জ্ঞান শুধুমাত্র জাতীয় উন্নয়নের চাবি-কাঠি নয়, এটি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক উৎস হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক দেশ এখন জ্ঞান অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কেবল জ্ঞান এবং ধারণার মূল্য বৃদ্ধি করবে। যাই হোক এটি একবিংশ শতাব্দীতে করার এবং সফল হওয়ার জন্য মানবিক বুদ্ধিমত্তা রয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য দেশগুলোর উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে।’
দশটি প্রধান গ্রন্থাগারের সংগ্রহ নিয়ে গঠিত: সাধারণ গ্রন্থাগার, তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক লাইব্রেরি, শিশু গ্রন্থাগার, তথ্য কেন্দ্র, মানচিত্র এবং এটলাস লাইব্রেরি, মিডিয়া এবং আর্টস লাইব্রেরি, বিজনেস লাইব্রেরি, এমিরেটস লাইব্রেরি, সাময়িকী গ্রন্থাগার এবং একটি বিশেষ সংগ্রহ গ্রন্থাগার। প্রকৃত সংগ্রহ ছাড়াও লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের ইবুক এবং অন্যান্য ডিজিটাল মিডিয়াতে অ্যাক্সেস প্রদান করা যায়। অডিও বুক লাইব্রেরি প্রত্যেকের জন্য একটি চমৎকার সম্পদ এবং বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা যাদের পড়ার অসুবিধা রয়েছে তাদের জন্য দরকারী।
এছাড়াও অন্ধদের জন্য ব্রেইল বইয়ের একটি পরিসর তৈরি আছে। লাইব্রেরির সাথে সংযুক্ত একটি আধুনিক কফি হাউস ও থিয়েটার রয়েছে। কফি হাউসে বসে বসে চা কিংবা কফির চুমুকের সাথে সাথে বই অধ্যায়নে রস নিতে কার না ভালো লাগে? থিয়েটারে ৫৮০ জন মানুষ একসাথে বসে যেকোনো ইভেন্ট বা সেমিনারের লাইভ উপভোগ করতে পারবে।
লাইব্রেরিতে ৫ মিলিয়ন বইয়ের ধারন ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে আরবি এবং বিদেশী ভাষায় ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি মুদ্রিত এবং ডিজিটাল বই, অসংখ্য গবেষণামূলক, প্রায় ৭৩,০০০ মিউজিক স্কোর, ৭৫,০০০ ভিডিও, প্রায় ১৩,০০০নিবন্ধ, এবং ৩২৫ বছর ধরে একটি আর্কাইভের মধ্যে ৫,০০০টিরও বেশি ঐতিহাসিক প্রিন্ট এবং ডিজিটাল জার্নাল, সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৩৫,০০০প্রিন্ট এবং ডিজিটাল সংবাদপত্র এবং প্রায় ৫০০টি বিরল সংগ্রহ। পরিদর্শনের পূর্বে এমবিআরএল এর ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় এবং যাতায়াতের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সুবিধা ও রয়েছে।
Discussion about this post