মোঃ আকবর হোসেন : ২০১৮ থেকে নেদারল্যান্ডস বেইসড একটা আন্তর্জাতিক মেডিকেল অরগানাইজেশানে মনোবিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছি। বেশিরভাগ সময়ই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতেই থাকা হয়। এবার আছি পশ্চিম আফ্রিকায় সিয়েরা লিওনে।
সিকিউরিটি রিলেটেড কারণে এ পর্যন্ত কোন দেশেই (ইথিওপীয়া, সিরিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া) মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি নাই। মাঝে মাঝে জুমার নামাজে যেতে পারতাম। ৭৫% মুসলমানের দেশ সিয়েরা লিওনে আসার পর এখানে আলহামদুলিল্লাহ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি। এখানে মাকেনি শহরে অনেক মসজিদ। আমার বাসা থেকে ৪ মিনিট হাটা দূরত্বে ও একটা মসজিদ আছে ৷ এই প্রথম বাংলাদেশের বাহিরে কোথাও তারাবি নামাজ পড়ার সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন। গত শুক্রবার চাঁদ দেখা যাওয়ায় যথারীতি রাত তারাবি নামাজ শুরু হয়েছে এখানে। খুবই আগ্রহ ছিল আফ্রিকার তারাবি নামাজ কেমনে পড়ে, কয় রাকাত পড়ে সেটা জানার এবং দেখার।
রাত ৮ টায় মসজিদে গেলাম। সাধারণত এশার সময় এক কাতারে বেশি হয় না কিন্তু মাশা আল্লাহ অনেক মানুষ। মসজিদের পুরুষ এবং মহিলা অংশ, দুটোই ভরে গেছে প্রায়। ইমাম সাহেব কিছুক্ষন বয়ান করলেন সূরা মূলকের একটা আয়াত৷ এরপর এশার নামাজ শুরু করলেন।
৪ রাকাত ফরজ জামাতে শেষ হওয়ার পরপরই ইমাম নিয়ত করে আবার জামাতে নামাজ পড়া শুরু করলেন। আমি তো কনফিউজড, তারাবি শুরু হলো নাকি!! ২ রাকাআত সুন্নত পড়বো না!! আমাদের দেশে ফরজ ৪ রাকাআত পড়ে ২ রাকাত সুন্নত একা একা পড়ি সবাই। এখানে সেটা দেখলাম না। যাই হোক ইমাম সাহেবের সূরা পড়ার স্টাইল দেখে ধরে নিলাম এটা তারাবি নামাজই। এরা ৮ রাকাআত না ২০ রাকাত পড়ে, এটা জানার আগ্রহ থেকে অপেক্ষা করতেছিলাম ৮ রাকাআতের পর কি হয়।
প্রতি রাকাতে নির্দিষ্ট দুটো সূরা দিয়ে ৪ বৈঠকে ৮ রাকাআত নামাজ আদায়ের পর আবার তাত্ক্ষণিক ২ রাকাত নামাজ আদায় করলো। আমি ভাবলাম তাহলে তারাবি নামাজ এখানেও ২০ রাকাআত পড়ে। ১০ রাকাআত পর ইমাম আবার নামাজ শুরু করলেন, এক রাকাআত শেষ করেই বসে পড়লেন!! আমি মহা কনফিউজড!! ইমাম কি ভুলে এক রাকাআত পড়ে বসে গেল!! আল্লাহু আকবর বলবো কি বলবো না!! ভাবলাম অপেক্ষা করি। ইমাম সালাম ফিরালো এবং দেখলাম যে নামাজ শেষ, সবাই রিলাক্সে বসে পড়লো।
আমি ইমামের ঠিক পিছনেই ছিলাম। ইমাম কে জিজ্ঞেস করলাম আমরা তারাবি কয় রাকাআত পড়েছি? ইমাম বললো তারাবি ৮ রাকাআত আর বেতের নামাজ ৩ রাকাআত!! আমি তো আবার কনফিউজড!! আমি তাকে বললাম আমরা তো বেতেরের তিন রাকাআত একসাথে পড়ি, সে উত্তর দিল, এখানে আমরা ২ রাকাআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পরে আলাদা আর এক রাকাআত পড়ে বেজোড় করি।

আসলে সব ইবাদাতই আল্লাহর জন্য। একেক দেশে একেক নিয়মে মানুষ নামাজ পড়ে। এখানে আরও যেটা দেখলাম অনেকেই হাত বাঁধে না। সোজা করে রাখে নামাজের সময়। একটা মসজিদে মাগরিব পড়ার সময় দেখলাম ইমাম পুরোটা সময় হাত ছেড়ে নামাজ পড়িয়েছেন। আর জামাতের সময় জোরে আমিন পড়ে এরা সবাই। প্রথমবার ইথিওপিয়াতে এক জুমার নামাজে হঠাৎ সমস্বরে আমীন শুনে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম৷
বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশেই এসব বৈচিত্র্য দেখা যায় হয়ত৷ কিন্তু সেখানে এসব নিয়ে অন্তত উচ্চ-বাচ্ছ নাই। “আমার টা সঠিক, অমুকের টা ভুল” এরকম ঘোষণা ও কেউ দেয় না। দুঃখের বিষয়, আমাদের বাংলাদেশে “আমীন” জোরে বলা না বলা নিয়ে, হাত বুকের উপর বাঁধা নাকি নাভির উপরে বাঁধা নিয়ে কত তর্ক বির্তক ও ফতোয়া দেয়া হয়। কিন্তু ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই। আল্লাহই সবার প্রচেষ্টাগুলো এবং তাকওয়াটাই কবুল করবেন৷ আমীন।
লেখক : মনোবিজ্ঞানী
মাকেনি, এমএসএফ-হল্যান্ড
সিয়েরা লিওন।
























