বাজি ধরা যায়, সিরিজ শুরুর আগে আপনিও এটা ভাবেননি! তবে যা ভাবা যায় না ক্রিকেটে তো সেটাই ঘটে।যেমন সেঞ্চুরিয়নে অবিশ্বাস্য এক বাংলাদেশের দেখা মিললো। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন তাসকিনরা। তৈরি হলো নতুন ইতিহাস। স্বপ্নের শুরুটা প্রথম ম্যাচেই। দ্বিতীয় ম্যাচে হোঁচট। তবে বুধবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে রীতিমতো অনন্য টাইগার বাহিনী।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় শক্তিধর ভারত। সেখানে নিজেদের শেষ দুই সিরিজে ৫-০তে ধবলধোলাই হয় এশিয়ার আরেক ক্রিকেট শক্তি শ্রীলঙ্কা।
তবে প্রোটিয়াদের ভিন্ন চিত্র দেখালো বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জিতলো তামিম ইকবালের দল। তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহজেই হারায় বাংলাদেশ। টসে হেরে আগে ফিল্ডিং শেষে স্বাগতিকদের মাত্র ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দেয় সফরকারীরা। একই মাঠে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিল লাল-সবুজের দল। তবে জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় দিয়ে সমতায় ফিরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বুধবার কাগিসো রাবাদার উইকেট নেয়ার পর ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বলে ওঠেন ‘ম্যাগনিফিসেন্ট, ব্রিলিয়ান্ট, আউটস্ট্যান্ডিং!’ তাসকিন আহমেদকে বিশেষায়িত করার জন্য আতহার আলীকে যদি তখন আরও বলার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে হয়তো নিজ অভিধানের সব শব্দই ব্যবহার করতেন তিনি! দক্ষিণ আফ্রিকার নিজ দুর্গ সেঞ্চুরিয়নে বল হাতে যে পারফরম্যান্স দেখালেন তাসকিন, তাতে আতহার নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই প্রশংসার দাবিদার তিনি। তাসকিনের ১০ ওভারের কোটা পূর্ণ করার আগেই শেষ হয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। তার বোলিং ফিগার ৯-০-৩৫-৫। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে ৩৭ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাদের দলীয় সর্বনিম্ন্ন ইনিংস এটি। ২০১৫তে মিরপুরে ১৬২ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্যারিয়ারে এর আগেও একবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ২০১৪তে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডেতে। তবে বিদেশের মাটিতে এবারই প্রথম নিলেন ৫ উইকেট। আইপিএল-এ খেলার সুযোগ পেয়েও ভারতে যাননি দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে। তাসকিন দেখালেন তার নিবেদন কতটুকু। ইনিংস বিরতির সময় মাইক্রোফোনে তিনি বলেন, ‘পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই খুশি। নিজের পরিকল্পনা মাফিক চেষ্টা করে গেছি। উইকেট থেকেও কিছুটা বাউন্স পেয়েছি। চেষ্টা করেছিলাম লাইন-লেন্থ বজায় রেখে খানিকটা বৈচিত্র্য আনতে। আমি এ পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। গত দেড় বছর ধরে এভাবেই কাজ করছি। আমার সাফল্যের চাবি এটাই।’ বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। আগের সেরা এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মেহেদী হাসান মিরাজের ৬১ রানে ৪ উইকেট। ২০১২ সালের পর প্রথম বোলার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেলেন তাসকিন। সর্বশেষ ২০১২ সালে পার্লে ৫ উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা।
অভিষেকের পর এ নিয়ে ৪৮টি ওয়ানডে খেললেন তাসকিন, উইকেট ৬৭টি। এর আগে বিদেশে তার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭ রানে ৪ উইকেট। এশিয়ার বাইরে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচে ৩টি করে উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩ রানে ৩টি এবং ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও ৩ উইকেট নেন। যদিও ওই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন থমকে যায় বাংলাদেশের। আর চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে তাসকিন পান ৩ উইকেট।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এ পেসার। তৃতীয় ম্যাচেও প্রথম তিন ব্যাটারের দু’জনকে সাজঘরে ফেরান তিনি। নিজের পরপর দুই ওভারে কাইল ভেরাইনা ও ইয়ানেমান মালানের উইকেট তুলে নেন। এরপর তার শিকারে পরিণত হন ডেভিড মিলার। একই ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও কাগিসো রাবাদাকে আউট করে তাসকিন পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। তার ৫ উইকেটের চারটিই এসেছে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমের ক্যাচ হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে এত ক্যাচ আগে কখনও নেননি বাংলাদেশের কোনো কিপার।
Discussion about this post