রহস্যজনক কারণে বিমানের সিনিয়র পাইলট ও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরীচ্যুত করেছে বিমান। মঙ্গলবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চাকরীচ্যুতির এই আদেশ জানানো হয় তাকে। চিঠিতে তার চাকরীচ্যুতির বিষয়ে সুনিদৃষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
শুধু বলা হয়েছে এসোসিয়েশেন অব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের আটিক্যাল ৫৯(বি) এর ক্ষমতা বলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এই চাকরীচ্যুতির আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিমানের ২৬৫ তম বোর্ড সভার দেয়া ক্ষমতা বলে বিমান এমডি এই চাকরীচ্যুতির আদেশ দেন।
চিঠিটি দুপুরেই তড়িঘড়ি করে মেইল যোগে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিমান সুত্রে জানাগেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানে চাকরী করা কালীন কোন বকেয়া পাওনা থাকলে তাকে তার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করতে বিমানের অ্যাডমিন শাখাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকরীচ্যুতির ঘটনায় গোটা বিমান জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আতঙ্ক নেমে এসেছে পাইলটদের মধ্যে। এই ঘটনায় বিকালে জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাপা নির্বাহী কমিটি। শুধু বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখাই নয়, এই ঘটনায় বিমানের সবগুলো বিভাগ জুড়ে কর্মচারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে।
পাইলটরা বলেছেন, এই ঘটনায় বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট চরম ঝুকিপুর্ণ হয়ে পড়বে। কারণ এরকম আতঙ্ক নিয়ে যে কোন পাইলটের পক্ষে ফ্লাইট পরিচালনা বড় ধরনের ঝুকিপুর্ণ। হাজার হাজার কোটি টাকার উড়োজাহাজ এবং শত শত যাত্রীর জীবন নিয়ে যেসব পাইলট আকাশে উড়েন এই অবস্থায় তারা চরম আতঙ্কিত।
তারা আরো বলেন, ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানের সব পাইলটদের পক্ষে আন্দোলন করেছেন। নিজের জন্য কোন কিছুই করেননি। বাপার পুরো নির্বাহী কমিটি ও এবং বাপার সব সদস্যদের জেনারেল মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাপ্টেন মাহবুব মিডিয়ায় কথা বলেছেন।
বাপার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কোন ধরনের অগ্রিম নোটিশ ছাড়া হঠাৎ তড়িঘড়ি করে একটি রেজিস্টার্ড এসোসিয়েশনের সভাপতিকে টার্মিনেট করা সম্পুর্ণ অবৈধ হয়েছে। বিমান এমডি কোনভাবেই এই আদেশ দিতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, যে কোন কর্মকর্তা কিংবা পাইলটকে চাকরীচ্যুতি করা যায়। কিন্তু সেজন্য নিদৃষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হবে। তাকে নোটিশ দিতে হবে।
অভিযুক্ত সে নোটিশের জবাব দিবেন। এভাবে যে কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরীচ্যুতির আগে তাকে কোন ধরনের নোটিশ দেয়া হয়নি।
তবে বিমানের পক্ষ থেকে এই চাকরীচ্যুতির ঘটনায় কোন কারণ উল্লেখ না করা হলেও নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাগেছে সম্প্রতি বিমানের কাতার, দুবাই, ওমান ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট সিডিউল লন্ডভন্ড হওয়ার ঘটনার সঙ্গে বাপা সভাপতির হাত রয়েছে বলে বিমান ম্যানেজমেন্ট মনে করছেন। ম্যানেজমেন্টের ধারনা বাপা সভাপতির নেতৃত্বে পাইলটরা কৃত্রিম পাইলট সংকট তৈরী করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বাপা সভাপতি ও ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের চাকরীচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেণ । তিনি বলেন, আইনানুযায়ীই তার চাকরীচ্যুতির আদেশ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় ফ্লাইট পরিচালনা ঝুকিপুর্ণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন পাইলট যদি আতঙ্কিত বোধ করেন কিংবা অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তিনি নিজকে সিক ঘোষনা করতে পারেন। ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ তখন তাকে ফ্লাইট দিবে না। তবে পুরো অপারেশন ঝুকিপুর্ণ হবে এটা ঠিক না। (সুত্র যুগান্তর)
Discussion about this post