করোনা ভাইরাসে বিভিন্ন দেশে অন্তত তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রাণহানির অর্ধেকই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সৌদি আরবে। এ পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের ১৩০০ নাগরিকের মত্যু হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এর অভিবাসী বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ হাজারের মতো বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকের মৃত্যু হয়।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন এর প্রধান শরিফুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, তাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজারের মতো প্রবাসী মারা গেছেন যাদের অর্ধেকের বেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত ছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০২০ সালে ২৮৮৪ জন বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আসে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৫৫১ জনের মরদেহ এসেছে। তারা করোনাসহ বিভিন্ন রোগ ও দুর্ঘটনায় মারা যান। এই সময়ে প্রবাসে ঠিক কতোজন বাংলাদেশি মারা গেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। দেশে যে সংখ্যক মরদেহ আসে এর বাইরেও অনেক প্রবাসীকে বিদেশে দাফন করা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে দেশে ফেরা অনেক প্রবাসীরও মৃত্যু হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যুর হিসাব রাখে। প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ সহায়তাও দেয় এই বোর্ড। করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত কতোজন বাংলাদেশি মারা গেছেন তার হিসাব চেয়ে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চিঠি দিয়েছিল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এ চিঠির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে তথ্য পাঠানো হয়।
সেই অনুযায়ী দেখা যায়, গত ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দেশে ২২৯৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ ১১৯৪ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওমানে ৩৫২, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৮৮, মালয়েশিয়ায় ১৩২, বাহরাইনে ৯৭ জন বাংলাদেশি করোনায় মারা যান। এছাড়া ব্রুনাইয়ে ২৪, কাতারে ৬২, জর্ডানে ১২, ইরাকে ২৯, ইতালিতে ৬২, লিবিয়ায় ৬, সিঙ্গাপুরে ৪ এবং মালদ্বীপে ৮ জনের মৃত্যু হয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরো অনেক দেশের পরিসংখ্যান নেই।
ওদিকে বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
অধিদপ্তরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি জানান, শিশুদের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেয়া হবে। তবে ফাইজারের টিকার সংরক্ষণ জটিল হওয়ায় আপাতত জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে ২১টি কেন্দ্রে শিশুদের টিকা দেয়া হবে। কোন কেন্দ্রে কখন শিশুদের টিকা দেয়া হবে তা পরে জানানো হবে। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কীভাবে হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, প্রথমে স্কুলের কাছ থেকে তালিকা এনে তাদের তথ্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হবে। পরে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। শিশুদের টিকা কেন্দ্র হবে সাধারণ কেন্দ্র থেকে আলাদা।
সর্বশেষ একদিনে করোনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ৫৪৩ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩৫। গত কিছু দিন ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং প্রাণহানি ক্রমে কমে আসছে।
ভয়েস অফ এমেরিকা বাংলা
Discussion about this post