মিজানুর রহমান (৩৯) দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সিলেটের মৌলভীবাজারের গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী, সন্তান থাকেন। জুলাই মাসে হঠাৎ করে মিজানের ইমো থেকে তার স্ত্রী লিপা আক্তারের ইমো নম্বরে একটি কল আসে। নম্বরটি তার স্বামীর হলেও অপরিচিত কন্ঠের এক ব্যক্তি সালাম দিয়ে বলেন, আপনার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তার চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। কিছু বুঝে উঠার আগে লিপি অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
একই দিন প্রবাসী মিজানের আরো কয়েকজন আত্মীয়ের মোবাইলে ওই নম্বর থেকে কল করে একই সমস্যার কথা বলা হয়। এভাবে আরও ৫০ হাজার টাকা বাগিয়ে নেয়।
টাকা নেয়ার পর নম্বরগুলোকে করা হয় ব্লক।
এদিকে মিজানের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনরা তার ইমো নম্বরে কল করে পাচ্ছিলেন না। এতে তাদের মধ্য সন্দেহ বাড়ে। পরে তারা মিজানের সিমে কল করে বুঝতে পারেন তারা হ্যাকারের ফাঁদে পড়েছিলেন।
শুধু মিজানই নয়। সম্প্রতি ইমো হ্যাকিং চক্র প্রবাসীসহ দেশের অনেককে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ থানায় জিডি ও মামলা করেছিলেন। পরে এক ভুক্তভোগীর করা পল্টন থানার মামলায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় ইমো হ্যাকিং চক্রের দুই সদস্যকে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো পলাশ আলী (২৭), সাব্বির হোসেন (২৯)।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এই হ্যাকিং চক্রের মূলহোতা পলাশ আলী। সাব্বির হোসেন
প্রবাসী বাংলাদেশীদের মোবাইল নাম্বার কৌশলে সংগ্রহ করে পলাশ আলীকে দিত। পরে পলাশ ইমো হ্যাকের উদ্দেশ্য এসব নাম্বরে ওটিপি কোড পাঠাতো। বিভিন্ন কৌশলে প্রবাসীদের কাছ থেকে ওটিপি কোড সংগ্রহ করে ইমো আইডি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেত। পরে ভুক্তভোগীদের অজান্তে তাদের আত্মীয় -স্বজনের কাছে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়ে টাকা আদায় করতো। আবার অনেক সময় ভুক্তভোগীদের আত্মীয়
স্বজনের নিকট কল দিয়ে বিভিন্ন বিপদ আপদের কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
চক্রের মুলহোতা পলাশ আলী
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছে। আর তার সহযোগী সাব্বির হোসেন এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পলাশ আলী এর আগে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত। আর সাব্বির হোসেন লেখাপড়া করত। চক্রটি ২০১৮ সাল থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। তখন থেকেই তারা বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে।
ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জোনায়েদ আলম সরকার মানবজমিনকে বলেন, এই হ্যাকারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন পর্যালোচনা, সিডিএমএস এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা তথ্য প্রযুক্তিতে পারদর্শী। তারা ইমো হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের আত্মীয়- স্বজনের নিকট টাকা ধার চায় এবং তারা না বুঝে টাকা দিত। টাকা নেয়ার পর ভুক্তভোগী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা জানতে পারে তার ইমোটি হ্যাক হয়েছে। এভাবে ইমো হ্যাকাররা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ইমো থেকে কখনো ওটিপি কোড আসলে উক্ত কোডটি কারো কাছে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিকট আত্মীয় স্বজন ইমোতে বিপদের কথা বলে টাকা চাইলে যাচাই বাচাই না করে টাকা দেয়া যাবে না। ইমো একাউন্টটি অন্য কারো দখলে আছে কিনা সেটি যাচাই করার জন্য ইমো সিটিংস এ গিয়ে একাউন্ট এন্ড সিকিউরিটি অপশনে ম্যানেজ ডিভাইজ এ ক্লিক করলেই দেখা যাবে একাউন্টটি অন্য কারো দখলে আছে কিনা।
Discussion about this post