এক সময় বিদেশের মাটিতে কোন প্রবাসী মারা গেলে শোরগোল পড়ে যেত। লাশ দেশে পাঠানো পর্যন্ত প্রবাসীদের মাঝে বেদনাবিধুর উৎকণ্ঠা কাজ করতো। করোনা পরিস্থিতি এই অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। করোনার কারনে লাশ দেশে পাঠাতে বিপত্তির কারণে পরিবারের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফন করা হচ্ছে পরবাসে। এতে করে শত শত প্রবাসীকে শেষবারের মতো দেখা থেকেও বঞ্চিত হন স্বজনরা।
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠানো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জাতীর সোনার ছেলে দেশে ফিরছে বাক্সবন্দি লাশ হয়ে।
জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৯৩ সালে আমিরাত আসেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের রহিম উল্ল্যাহ (৬২)। গত ১০ জুন অসুস্থ হয়ে শারজা কুয়েতি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন মারা যান রহিম উল্ল্যাহ। মরহুম রহিম উল্ল্যাহ’র স্বজন মন্জুর আর মান্নান জানিয়েছেন ২৯ জুন বুধবার সকালে ২৮ বছরের প্রবাস জীবনে শেষে দেশে ফিরেছে তার বাক্সবন্দি লাশ। রহিম উল্ল্যাহ’র ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের সালা উদ্দিন (৩৫)। বছরের শুরুতে ছুটি কাটিয়ে আমিরাতে ফিরে আসার ১ মাসের মাথায় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা করে জানাযায় করোনা নেগেটিভ। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না দেখে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিমান টিকেটও কিনেন ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার ফ্লাইটে।
আমিরাতে থাকা তার স্বজন জাসেদুল ইসলাম জাগোনিউজকে জানান সালা উদ্দিন বিমানের টিকেট নিয়ে দেশে ফেরার কথা থাকলেও দেশে ফেরার তারিখেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ফ্লাইটের দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় খলিফা হাসপাতালে ভর্তি’র পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টায় তার মৃত্যু হয়। করোনা সনাক্ত হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।পরিবারের সদস্যরা বঞ্চিত হয় শেষবারের মতো দেখা থেকে। আমিরাতের আজমানে দীর্ঘ ১৫ বছর কর্মরত ছিলেন সালা উদ্দিন। মৃত্যু কালে তিনি দুই মেয়ে রেখে গিয়েছেন।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত এক বছরে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয় ২৯২ জন প্রবাসীর লাশ। জুলাই থেকে জুন এই এক বছরে আবুধাবি দূতাবাসের হিসাব অনুযায়ী, আমিরাতের রাজধানী ও আশেপাশে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয়েছে ১৩৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ। এর মধ্যে ২৩ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং ১১০ জন মারা গেছেন করোনায়।
দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে ১৫৯ জন প্রবাসীর লাশ। এর মধ্যে ১২৭ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর গত এক বছরে দেশে ফিরেছে ৩২৭ জন প্রবাসীর লাশ।
সম্পাদনা: মুহাম্মাদ ইছমাইল।
Discussion about this post