মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম থেকেঃ করোনা মহামারির কঠিন প্রভাবে সমস্ত পৃথিবী বিপর্যস্ত। মানুষ আজ দিশেহারা। এ বিপর্যয় ও অশান্তির কারণ যদি অনুসন্ধান করি তবে তার উত্তর পাওয়া যাবে পবিত্র কোরআনের সূরা রূমের ৪১ নং আয়াতে। যেখানে মহান আল্লাহপাক বলছেন- স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।
মহান আল্লাহর প্রিয়তম সৃষ্টি মানুষ যতক্ষণ আল্লাহ ও রাসূলের পথে ও মতে থাকে ততক্ষণ নিরাপদ থাকে। কিন্তু মানুষ যখন নফসানিয়তে ডুবে আল্লাহকে ভুলে যায় তখনি অশান্তির সূচনা হয়। নফসানিয়ত তথা পশুত্ব থেকে পবিত্র হয়ে ইনসানিয়াত তথা মনুষ্যত্ব অর্জনের রূপরেখাই হলো হযরত গাউছুল আজম এর তরিক্বতের অন্যতম বিশেষত্ব। শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুশীলনের পাশাপাশি যখন সুন্নাত ও নফল এবাদতে মানুষ মশগুল হয় তখন ঐ বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠে। নফসকে পবিত্র করার জন্য তাওয়াজ্জুহ’র কোন বিকল্প নেই। তাওয়াজ্জুহ হলো অন্তর্দৃষ্টি প্রক্ষেপণ, যার মাধ্যমে প্রিয় রাসূল (দ.) এর নূরে বাতেন মানুষের ক্বলবে দেয়া হয়। তাওয়াজ্জুহ গ্রহণের পর এর বাস্তবতা এমন যে নিজের ক্বলবই এর সাক্ষী দেবে। অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে মনগড়া কোন কিছুর ভিত্তি নেই। বিজ্ঞানময় পৃথিবীতে এটাই যেন একটি রূহানী বিজ্ঞান।
মানুষ যখন দেহের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন লতিফায় তাওয়াজ্জুহ গ্রহণ করে তখন মানবীয় দোষত্রুটি দূর হয়। মানুষ নিজের মধ্যে মানবীয় মূল্যবোধের সত্যিকার উপলব্ধি বুঝতে পেরে আল্লাহ ও রাসূল (দ.) এর আনুগত্যে জীবন পরিচালিত করে। হারাম-হালালের পার্থক্য বুঝতে পারে। তখনই ঐ ব্যক্তি আলোকিত মানুষে পরিণত হয়। ফলশ্রুতিতে ঐ ব্যক্তির কর্মকান্ডে জমিনে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। এভাবে মানুষ যখন হৃদয়ে দ্বীন ইসলামকে ধারণ করবে, সেটা যেমন ঐ ব্যক্তির আখেরাতের মুক্তির নিশ্চয়তা দেবে তেমনি খোদার রহমতে পৃথিবীটা ভরে উঠবে। এমন করেই দূর হবে যত বিপর্যয়, দুর্যোগ ও দুর্ভোগ। শান্তি প্রতিষ্ঠার এ মহান বার্তা দিতেই আজকের এই এশায়াত সম্মেলন। গতকাল ৩০ জুন (বুধবার) চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদস্থ কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ কমপ্লেক্স এর “খলিফায়ে রাসূল (দ.) হযরত গাউছুল আজম মুনিরী (রা.) সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এশায়াত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের বর্তমান পীর ছাহেব ক্বেবলা মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব ।
তিনি আরো বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের খেদমতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও মর্মবাণী জনগণের মধ্যে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলন উপলক্ষে প্রদানকৃত বাণীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সূফিবাদ চর্চার মাধ্যমে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের সার্বিক কর্মকান্ডের প্রশংসা করায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও এশায়াত সম্মেলন উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রদত্ত বাণীতে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের তরিক্বতপন্থী তরুণ ও যুবকরা তাদের চারিত্রিক আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজে তাদেরকে সৃজনশীল মানব সম্পদে পরিণত করেছেন বলে উল্লেখ করায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে আশাবাদ ব্যক্ত করে সম্মেলনের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করে বাণী দেওয়ায় প্রধান অতিথি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুর।
পরিশেষে, মাননীয় প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে অনুষ্ঠিত এ এশায়াত সম্মলনে প্রিয় নবী (দ.) এবং হযরত গাউছুল আজম (রা.)’র উসিলায় বৈশ্বিক মহামারী করোনার ভয়াল প্রকোপ থেকে সমগ্রবিশ্ব, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর নাজাত ও নিরাপত্তা কামনার পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা ও সুস্বাস্থ্য, বর্তমান সরকারের উত্তরোত্তর কল্যাণ এবং দেশ-জাতির উন্নতি-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনায় মিলাদ-কিয়াম শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।
Discussion about this post