অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো। ২৮ দিনের উদ্বেগ-আতংক কাটিয়ে মালয়েশিয়া থেকে বাবা-মায়ের কোলে ফিরলেন বাংলাদেশি তরুণ নারায়ণগঞ্জের সন্তান রায়হান কবির। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটে ঢাকায় নামেন রায়হান কবির। এর আগেই বাবা শাহ আলাম তার কয়েকজন স্বজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসতে বিমানবন্দরে যান।
বিমানবন্দরে প্রিয় ছেলেকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা শাহ আলম। বাবা-ছেলের পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকেন কিছুক্ষণ। এর পর বাবার মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে মা রাশিদা বেগমের সাথে কথা বলেন রায়হান। বলেন, আর কোনো চিন্তা কইরো না, আমি চলে আসছি।
রায়হানের বাবা শাহ আলম জানান, সাাংদিকদের কারণে আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আমি কৃতজ্ঞ।cআমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমাদের রায়হান আমাদের কাছে আসবে। আজ রায়হান এসেছে। আমরা ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এই আনন্দ বুঝিয়ে বলতে পারব না।’ আদরের ধনকে কাছে পেয়েছি আর কিচ্ছু চাই না ।
তিনি জানান, ২৮ দিন ধরে আমদের পুরো পরিবার আতংকে ছিল। আমরা ভাবছিলাম আমাদের আদরের ছেলে আর আমাদের কাছে ফিরে আসবে কিনা। সে প্রতিবাদী। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছে।
দেশে ফিরে রায়হান কবিরের ভাষ্য- এই আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। গত ছয় বছরে কতবার যাওয়া-আসা করেছি। এবার অন্যরকম অনুভূতি। আমার বাংলাদেশ। আমার মাটি। আমার বাবা-মা। এই আনন্দ কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। দেশে-বিদেশে-প্রবাসে যারা পাশে ছিলেন, সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’
রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা জানান, শুক্রবার রাতে পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় তাকে বিমানে তোলা হয়। এর আগে, করোনার পরীক্ষায় তার নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে। যেহেতু রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশ কোনো অভিযোগ আনেনি, কাজেই তাকে কোনো আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।’
করোনা মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত ২৪ জুলাই রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ৬ আগস্ট পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিন মঞ্জুর করেন। বুধবার রিমান্ড শেষ হওয়ার পর পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এরপরেই ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় তার বিমানের টিকিট করা হয়। শুক্রবার সকালে রায়হানকে জানানো হয়, রাতেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।