বছরজুড়েই প্রচারিত হয় অসংখ্য নাটক, টেলিফিল্ম। টেলিভিশনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেশ সরব অনলাইন প্লাটফর্মও। দুই ঈদ তো বটেই, অন্যান্য বিশেষ দিবসেও নাটক প্রচার ছিল লক্ষণীয়। সেই সুবাদে প্রচুর ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন নির্মাতা থেকে অভিনয়শিল্পীরা। দর্শকদের কাছে পছন্দের কাজ টি উপহার দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন নাট্যকুশলীরা। তবে এতসংখ্যক নাটকের ভীড়ে দর্শকরা বেছে বেছে দেখবেন স্বাভাবিক। বছর জুড়ে নাটক প্রচারের মাধ্যমে আলোচিত সেরা পাঁচ নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী নিয়ে এই বিশেষ সালতামামি:
সেরা পাঁচ নির্মাতা:
১. আশফাক নিপুণ: নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ারের সেরা বছর পার করেছেন আশফাক নিপুণ। বছরের সবচেয়ে প্রশংসিত নাটক ‘ফেরার পথ নেই’ ও ‘সোনালী ডানার চিল’ এর মত সামাজিক সচেতনতামূলক সাহসী নাটক বানিয়ে বেশ বাহবা পেয়েছেন। তাঁর নির্মাণে অন্যান্য নাটকের মধ্যে লায়লা, তুমি কি আমায় মিস করো, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, কে, চলছে চলবে চাকা- অন্যতম। সবগুলো নাটকই কমবেশি দর্শকালোচিত হয়েছে।
২. শাফায়েত মনসুর রানা: পুরো বছরে নাটক বানিয়েছেন মাত্র তিনটি। এতেই শাফায়েত মনসুর রানা এই বছর দর্শকদের কাছে বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত নাম। ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপটে ‘সব মিথ্যে সত্যি নয়’, কিংবা সামাজিক সচেতনতামূলক ‘আমার নাম মানুষ’, দুটোই বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া ‘শহরে নতুন গান’ নামে আরেকটি নাটক বানিয়েছেন।
৩. মিজানুর রহমান আরিয়ান: গত বছরের মত এই বছরেও সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটকের নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান। তাঁর কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা বেড়েছে বহু গুণ, তবে সে অনুযায়ী পুরোপুরি সফল না হলেও ব্যর্থ নন। এই বছর তাঁর নির্মাণে ‘বুকের বাঁ পাশে’ দর্শকরা সবচেয়ে বেশি দেখেছে। এছাড়া ‘সংসার’ নাটকটিও বেশ প্রশংসিত হয়েছে, বাকি নাটকগুলোর মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, শোক হউক শক্তি, পাসওয়ার্ড, সুখে দু:খে, ফেসবুক ছাড়ার ৬ টি উপায় অন্যতম। তাঁর নাটকে অন্যতম বিশেষত্ব থাকে গান, সেটা এই বছরেও পাওয়া গেছে।
৪. শিহাব শাহিন: নাট্যাঙ্গনে গত দশ বছরের অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা তিনি। বছর জুড়ে যেইসব নাটক তিনি বানিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ‘বিনি সুতোর টান’, অনেক দর্শকরা এই নাটক দেখে চোখ ভিজিয়েছেন, তবে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে সামাজিক পদক্ষেপে নির্মিত নাটক ‘এই শহরে কেউ নেই’। এছাড়া শিহাব শাহিন পরিচালিত অন্যান্য নাটকের মধ্যে শেষ পর্যন্ত, আদিত্যের মৌনতা, বাস স্টপ, তুমি যদি বলো, কিছু দুঃখ সবারই থাকে, বন্ধন অন্যতম।
৫. মাবরুর রশিদ বান্নাহ: নাট্যজগতে এই বছর রেকর্ডসংখ্যক নাটক বানিয়েছেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। পুরো বছরেই তিনি নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ‘হোম টিউটর’ ও ‘লালাই’- দুটো নাটকই দর্শকরা বেশ প্রশংসা করেছে। প্রচারিত অন্যান্য নাটক সমূহের মধ্যে তনিমা, বেকার, ছেলেরাও কাঁদে, ব্রাজিল ভার্সেস আর্জেন্টিনা, ফুল হাতা হাফ শার্ট, ছাত্র, মানুষ হবো, ব্রা-দার, বেড সিন অন্যতম। নির্মাণের পাশাপাশি তিনি এইবার প্রযোজনাতেও নাম লিখিয়েছেন।
প্রায় দশ বছর পর নন্দিত নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী টিভি পর্দায় ফিরেছেন, বানিয়েছেন ‘আয়েশা’, এটিও বছরের অন্যতম আলোচিত নাটক। উদীয়মান নির্মাতাদের মধ্যে এই বছর বেশ প্রশংসিত হয়েছেন হিমেল আশরাফ, তাঁর নির্মিত শাড়ী, ওগো বধু সুন্দরী, সব গল্প রুপকথা নয় বেশ আলোচনায় এসেছে। ‘পাতা ঝরার দিন’ নির্মাণ করে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন রেদোয়ান রনি। হুমায়ূন আহমেদের উত্তরসূরী নুহাশ হুমায়ূন ‘৭০০ টাকা’ ও ‘পিজ্জা বয়’ নির্মাণ করে নজর কেড়েছেন।
এছাড়া অন্যান্য নির্মাতাদের মধ্যে হাসান মোরশেদ (সাদাসিধে মানুষের গল্প), সাগর জাহান (নীল গ্রহ), ইমেল হক (দ্য নাইট ওয়াচম্যান), সাজ্জাদ সুমন (কলুর বলদ), মুস্তফা কামাল রাজ (হ্যালো ৯১১ লাভ ইমার্জেন্সী), জাকারিয়া সৌখিন (উগান্ডা মাসুদ), আজাদ কালাম (দানব), মাহমুদুর রহমান হিমি (বাড়ি ফেরা), সুমন আনোয়ার (কমলার বনবাস), মাহমুদ দিদার (সিনেমা সিনেমা খেলা) অন্যতম।
সেরা পাঁচ অভিনেতা:
১. আফরান নিশো: এই মুহুর্তে নাট্যঙ্গনে নানা চরিত্রে অভিনয় করে বৈচিত্র্যময় অভিনেতা হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন আফরান নিশো। তাঁর অভিনীত বেশ সংখ্যক নাটক বছরজুড়ে আলোচিত হয়েছে। বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ‘বুকের বাঁ পাশে’ তো রয়েছেই, পাশাপাশি ফেরার কেউ নেই, লালাই, শাড়ী, হোম টিউটর নাটকেও মুগ্ধ করেছেন। এছাড়া অন্যান্য নাটকের মধ্যে লায়লা,তুমি কি আমায় মিস করো? ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, ছেলেরাও কাঁদে, ব্রাজিল ভার্সেস আর্জেন্টিনা, সব গল্প রুপকথা নয়, শোক হউক শক্তি, অনুভবে, শহরে নতুন প্রেমিক, দ্য জুনিয়র আর্টিস্ট লতিফ, ট্যাটু ৩ অন্যতম।
২. অপূর্ব: বড় ছেলের ব্যাপক সাফল্যের পর এই বছর অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন অপূর্ব। এই বছর তাঁর যেসব নাটক প্রচার হয়েছে তার মধ্যে বিনি সুতোর টান ও সংসার বেশ আলোচনায় এসেছিল,দুটি নাটকেই তাঁর অভিনয় সমাদৃত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নাটকের মধ্যে বেকার, তনিমা, শেষ পর্যন্ত, বাস স্টপ, তুমি যদি বলো, আদিত্যের মৌনতা, আমার পক্ষে তোমাকে রাখা সম্ভব না অন্যতম। তবে দর্শকরা এই জনপ্রিয় অভিনেতার কাছ থেকে আরো বৈচিত্র্যময় চরিত্র আশা করছেন।
৩. মোশাররফ করিম: নাট্যঙ্গনের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন মোশাররফ করিম। দারুন অভিনয়ে প্রচুর জনপ্রিয় যেমন হয়েছেন তেমনি কিছু নাটকে সমালোচিত ও হতেন। তবে এই বছর সেটা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন, নিজেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পর্দায় উপস্থাপন করে প্রশংসিত হয়েছেন। বছরব্যাপী প্রচারিত উনার নাটকের মধ্যে সাদাসিধে মানুষের গল্প, কহেন কবি ভূতনাথ, স্বর্ণকার, ফ্যাটম্যান, মাছের দেশের মানুষ, দানব, উগান্ডা মাসুদ, জমজ ১০ অন্যতম।
৪. রিয়াজ: চিত্রনায়ক রিয়াজ অনেকদিন ধরেই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত, তবে বিশেষ উৎসবে হাজির হন টিভি পর্দায়। এই বছর তাঁর অভিনীত প্রবাসীদের নিয়ে নির্মিত নাটক ‘কলুর বলদ’ অনেক দর্শক দেখেছেন, বিশেষ করে প্রবাসীরা এই নাটক অত্যন্ত পছন্দ করেছেন। এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে পরবর্তীতে সিক্যুয়েল ও বের হয়েছিল, পাশাপাশি প্রবাসী চরিত্রে নিজেও বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া তাঁর অভিনীত ‘কবির হোসেন একজন কাপুরুষ’ নাটকটিও দর্শকদের ভিন্নস্বাদ দিয়েছে।
৫. ইরফান সাজ্জাদ: বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি অভিনয়ে নিয়মিত, তবে এই বছর তাঁর জন্য বিশেষ বছর থাকবে। অভিনয় কিংবা জনপ্রিয়তা দুইটাতেই উন্নতি হয়েছে। এই বছর তাঁর প্রচারিত নাটক সমূহের মধ্যে কলি:২.০, হ্যালো ৯১১ লাভ ইমার্ঞ্জেসী, ফুল হাতা হাফ শার্ট, বিথীর বানান ভুল ছিল, বেড সিন, টকিং মেশিন, নিয়তি, ছলনা আলোচনায় এসেছে।
বর্ষীয়ান অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম ‘পাতা ঝরার দিন’ নাটকে স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। আরেক গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ ‘সোনালী ডানার চিল’-এ অভিনয় করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। পাসওয়ার্ড, মন মন্দিরেসহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে মনোজ কুমার ও চাকা, বিবাহ বিভ্রাট নাটকে অভিনয় করে ইয়াশ রোহান- দুইজনেই উদীয়মান অভিনেতা হিসেবে বেশ নজর কেড়েছেন।
এছাড়া অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে মাহফুজ আহমেদ (ওগো বধূ সুন্দরী), চঞ্চল চৌধুরী (নসু ভিলেন), আজাদ আবুল কালাম (নাইট ওয়াচম্যান), জাহিদ হাসান (মাখন মিয়ার শিক্ষিত বউটা), অ্যালেন শুভ্র (সিনেমা সিনেমা খেলা), তৌসিফ মাহবুব (এই শহরে কেউ নেই), জন কবির (সব মিথ্যে সত্যি নয়), তাহসান (বাড়ি ফেরা), জোভান (লাভ ভার্সেস ক্রাশ), কল্প (মর্ডান টাইমস) অন্যতম।
সেরা পাঁচ অভিনেত্রী:
১. মেহজাবীন: ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় কাটাচ্ছেন এই মুহুর্তের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন। এই বছরের অন্যতম সেরা আলোচিত নাটক ফেরার কেউ নেই, সোনালী ডানার চিল, বুকের বাঁ পাশে, লায়লা তুমি কি আমায় মিস করো, ওগো বধূ সুন্দরীর মত নাটকে নিজের অভিনয়ের দ্যূতি ছড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া রয়েছে লাভ ভার্সেস ক্রাশ, কে, সুখে দু:খের মতসহ বেশকিছু নাটক।
২. তিশা: বছরের অন্যতম আলোচিত নাটক ‘আয়েশা’তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন সময়ের সেরা অভিনেত্রী তিশা। এছাড়া তাঁর অভিনীত নাটক বছরজুড়ে প্রচারিত হয়েছে কলি: ২.০, জেনিফার তুমি লাল গোলাপ, কবিতার মত গল্প, রুপকথা, চরিত্র: স্বামী, ছলনা, একটু হাসো-সহ বেশ কিছু নাটক।
৩. তানজিন তিশা: এই বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রীদের তালিকায় একেবারেই প্রথমদিকে থাকবেন তানজিন তিশা, অভিনয়েও উন্নতি করেছেন। ‘এই শহরে কেউ নেই’ নাটকে অভিনয় করে বেশ সমাদৃত হয়েছেন,এছাড়া বেড সিন, হোম টিউটর, ছেলেটা বেয়াদব, মনজুড়ে, বাড়িফেরা, পাসওয়ার্ড, বোন, প্রেম ছবি সহ বেশ কিছু নাটক আলোচিত হয়েছে।
৪. জাকিয়া বারী মম: দর্শকমহলে সমাদৃত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম এই বছর চলচ্চিত্রে বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন, তবে এর মাঝেই নাটকেও নিজেকে সরব রেখেছেন। এই বছর তাঁর অভিনীত নাটকসমূহের মধ্যে আদিত্যের মৌনতা, বাস স্টপ, শেষ পর্যন্ত, পরশ, জলসাঘর, ধাঙ্গড়, সোনালী ইলিশের গল্প অন্যতম।
৫. সাবিলা নূর: দর্শকমহলে দিনদিন আস্থাভাজন অভিনেত্রী হয়ে উঠছেন এই সময়ের অন্যতম আলোচিত তারকা সাবিলা নূর। এই বছর শাড়ী, সব গল্প রুপকথা নয়, কিছু দুঃখ সবারই থাকে, শহরে নতুন গান, টকিং মেশিন, গল্পটা, ফ্রেন্ডস উইথ বেনেফিটসহ বেশ সংখ্যক নাটকে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন।
অনেকদিন পর অভিনয়ে এসে দর্শকদের বিমুগ্ধ করেছেন নন্দিত অভিনেত্রী ঈশিতা, ‘পাতা ঝরার দিন’ নাটকে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শকরা অনেকদিন মনে রাখবেন। নীলগ্রহ, কানামাছি ভোঁ ভোঁ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সফল প্রত্যাবর্তন করেছেন আরেক সাড়া জাগানো অভিনেত্রী অপি করিম। টেলিভিশন জগতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামান অনেকদিন অনিয়মিত থাকলেও এই বছর অভিনয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।
এছাড়া নাবিলা (সংসার), পূর্ণিমা (হ্যালো ৯১১ লাভ ইমার্ঞ্জেসী), অপর্ণা ঘোষ (সব মিথ্যে সত্যি নয়), সাফা কবির (তবুও ভালোবাসি), রিচি সোলায়মান (চাঁদের আলোয়), শমী কায়সার (সাড়ে তিনখানা চিঠি), মৌসুমী হামিদ (কমলার বনবাস), মিথিলা (বিয়ের দাওয়াত রইলো), শবনম ফারিয়া (জীবনের দিন রাত) অন্যতম।নতুন বছরেও দর্শকরা নাট্যকুশলীদের কাছ থেকে ভালো ভালো নাটক উপহার পাবেন, এই প্রত্যাশা করছি।
সেলিব্রেটিবিডি/এইচআর
Discussion about this post