সাদেক আহমেদ, সৌদি ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশী :
কর্তব্য পালন করতে গিয়ে রাত জাগতে হয়। প্রতিদিন রাতজাগা তো আর চাট্টেখানি কথা নয়। তবুও নিজ ইচ্ছায় রাতের সময়টা ডিউটির জন্য বেছে নেই। রাত জাগতে গিয়ে মাঝে মধ্যে যখন চোখে একটু তন্দ্রা এসে যায় তখন কর্মস্থলের পাশেই ছোট্ট চায়ের স্টলে গিয়ে দু এক কাপ চা পানে আবার শরীরকে একটু চাঙ্গা করে নেই।
প্রতিদিনের মতো কর্মস্থলের পাশের চা স্টলে গিয়ে দোকানদার ভাইয়ের সাথে মজা করে একটু আধটু আরবিতে কথা বলি! কারনটা হল তিনিও আমার মত সাবেক প্রবাসী। তাই তার সাথে একটু জমেও ভালো। আমাদের আরবি ভাষার কথোপকথন যখন একটু জমে উঠেছিল তখন দেখি পাশ থেকে পঞ্চাশোর্ধ আরেক কাকা আমাদের আরবী কথার সাথে তাল মিলাচ্ছেন। ততক্ষণে বুঝতে বাকি রইলোনা যে তিনিও আমাদের মত সাবেক প্রবাসী।
তিনজনের কথার মাঝে জমে উঠলো আরেক ধরনের কথাবার্তা কখনো বাংলা কখনো আরবি মিলিয়ে জানতে চাওয়া কে কোন দেশে ছিলেন এবং কতদিন ছিলেন। অবশেষে জানা গেলো সবাই সাবেক সৌদি প্রবাসী।
তারপর সবার কথায় সুর পাল্টে গিয়ে এলো বিষাদের সুর। বিষাদের সুর তাদের থাকবেই না কেন বলেন এছাড়া তাদের আর আছে কি? একসময় যারা নিজেরা মোমবাতির মতো পুড়েপুড়ে পরিবার পরিজনদের জীবনে আলো ফুটিয়ে ছিলেন। আজ তাদের নিজের জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু বাঁচিয়ে রাখতে একেকজন একেক রকমের কর্ম করতেছেন! যা তারা কখনোই কল্পনা করেন নি।
২৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে একজন ছোট্ট চা,পানের দোকান দিয়ে নিজের জীবনের শেষ দিন গুনছেন আর আরেকজন ২১ বছর প্রবাসে থেকে লাখ লাখ টাকা কামিয়েও শুধু মাত্র প্রিয়জনদের বিশ্বাসঘাতকতার ছোঁবলে পড়ে কেবলমাত্র দু,বেলা দুমুঠো ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সমুদ্র সৈকতের পাড়ে রাস্তায় রাস্তায় মাথায় টুকরির বোঁঝা বয়ে নিয়ে দশ পাঁচ টাকা দামের শামুক ঝিনুক আর সাগরের নুড়ি পাথর দ্বারা তৈরি করা জিনিষ বিক্রি করে অতীতের স্মৃতি কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন।
আমার কথা নাই বা বললাম দীর্ঘ এক যুগ প্রবাসে থেকেও আজ…..
প্রবাসে থাকতে প্রবাসীরা কেন যে বুঝেনা প্রয়োজনে সবাই তোমার প্রিয়জন, প্রয়োজন শেষে তুমি হয়ে যাবে অন্যজন।
Discussion about this post