মোহাম্মদ এনামুল হক ,আবুধাবি : ‘কুরবান’ আরবী শব্দ। এই ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসী বা উর্দূতে কুরবানীরূপে পরিচিত হয়েছে। কুরবানী অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ করা। আত্মত্যাগকেও কোরবানী হলা হয়। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বিশেষ তরীকা বা পদ্ধতীতে যে পশু যবেহ করা হয় তাকে ‘কুরবানী’ বলা। জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যায়। তবে প্রথম দিন অর্থাৎ জিলহজ্জ্বের ১০ তারিখে কুরবানী করা উত্তম। ঈদের নামাজের আগে কুরবানী হবেনা।
কুরবানীর গুরুত্বঃ
আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর সময় থেকেই চলে আসা কুরবানীর প্রথা মুসলমান জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আর এই কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন- “তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও কুরবানী কর।” (সূরা আল-কাউসার : আয়াত- ২) আল্লাহ বলেন “আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।” (সুরা হজ্জ- আয়াত-৩৬) মহান আল্লাহ পাক সুরা ছাফফাতের ১০৭-১০৮ আয়াতে আরো বলেন, “আর আমরা তার (অর্থাৎ ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী’। এবং আমরা এটিকে (অর্থাৎ কুরবানীর এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’ (ইবনে মাজাহ)। উপরোল্লিখ কোরআনও হাদীস আলোকে বোঝা যায় কুরবানী করা ওয়াজিব, তবে অনেক ওলামায়ে কেরামের মতানুসারে কুরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। কুরবানী হযরত ইসলামের একটি বড় নিদর্শন যা ‘সুন্নাতে ইব্রাহীমি’ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং সাহাবীগণ(রাঃ)ও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন।
কোরবানীর তাৎপর্যঃ
ঈদুল আজহার দিন মুসলমানরা পশু কুরবানী দিবে আল্লাহ তায়লার সুন্তুষ্টি এবং আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্যে। এ দিন কুরবানীদাতা পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়লার নৈকট্য অর্জন করে থাকেন। আল্লাহ কুরবানীর পশুর কিছুই খান না। তিনি দেখতে চান মানুষ কতটা আল্লাহর ভীতি বা তাকওয়া অর্জন করেছে এবং কে তাঁর হুকম যথাযথ পালন করেছে। তাই আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন- আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।’ (সূরা হজ্ব : আয়াত-৩৭)
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘’কুরবানীর দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নিকটে আর কিছু নেই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুর শিং, লোম ও ক্ষুরসমূহ নিয়ে হাজির হবে। আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর নিকটে বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানী দ্বারা নিজেদের আত্মাকে পবিত্র কর।‘’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)।
কুরবানী দিতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাই পশু কুরবানীর সাথে সাথে মনের পশুটিকেও কুরবানী দিয়ে দিতে হবে। তবেই আমাদের কুরবানী আল্লাহ কবুল করবেন।
Discussion about this post