জান্নাত আকতার : মনির সাহেবের সাথে রাহাতের আড্ডাটা ভালোই জমে গেছে এতদিনে। ছুটিতে দুজন খোশ গল্প করে সময় কাটিয়ে দেয়। আজ মনির সাহেবের বাড়িতে রাহাতের দুপুরের দাওয়াত। মনির সাহেব ও রাহাত দুজনে কথা বলছিল। এমন সময় পাশের রুমে মৃদু সুরে চুড়ির টুংটাং ও কাপড় একটু খসখস শব্দ শুনতে পাচ্ছিল রাহাত। খাবার শেষে মনির সাহেবের স্ত্রী তাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে। মনির সাহেবের স্ত্রীকে দেখে রাহাতের বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো! এই সেই সুরেলা……..
যার সাথে সে ছোটবেলায় পুতুল খেলতো। যাকে সে নিজের বউ বলে মনে করত। সুরেলার মা আমার সাথে সুরেলা বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই চাকরির নাম করে সুরেলা কে বিয়ে না করেই পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু চাকরিটাতো হলোই না বরং সুরেলাকেই হারালাম। শুনেছিলাম সুরেলার নাকি ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে। হ্যাঁ হয়েছেই’তো। সে মনির সাহেবের স্ত্রী। ঢাকার বাহিরে ভালো চাকরি করে সে। কফি শেষ করেই রাহাত বাড়িতে ফিরে এলো। বাসায় এসে কোন কাজে মন বসাতে পারছেনা সে। নিজের বিবেক নিজেকেই বলছে যাকে ইচ্ছে করে হারিয়েছো তাকে এখন মাথা খুঁড়ে মরলেও পাবে না।
যে সুরেলা তার ছোটবেলার বন্ধু ছিল। যার সাথে এত বর বউ খেলেছে । সেই তাকে এখন দেখা বারণ ,কথা বলা দোষ, তার বিষয়ে চিন্তা করাও পাপ।
আর মনির সাহেব হঠাৎ কোথায় থেকে এসে তিন শব্দের কবুল বলে পৃথিবীর সবার থেকে সুরেলা কে এক মুহুর্তে নিজের করি নিলো।
আজ সকাল হতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টি আর ঝড়ের বেগ যেন বেড়েই চলছে। রাত যত গভীর হচ্ছে বাতাসের বেগ ততই বেড়ে চলছে। সাথে প্রচন্ড বৃষ্টিও। এ রাত্রে ঘুমানোর চেষ্টা করাও বৃথা। সুরেলার জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। মনির সাহেব কিছু দিনের জন্য বাইরে গেছেন।
আমি সুরেলাকে দেখার জন্য বাইরে নেমে এলাম। সুরেলা দাঁড়িয়ে আছে। রাতের আকাশে তারার আলো নেই। আজ যেনো পৃথিবীর সব আলো নিভে গেছে! আজ সমস্ত বিশ্ব সংসার ছেড়ে সুরেলা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আমি ছাড়া সুরেলার অন্য কেউ নেই! এমন সময় একটা কথা বললেও কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু না একটা কথাও বলল না! কেউ কাউকে একটা প্রশ্নও করলাম না। দুজন-দুজনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আর অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলাম!
রাত্রি প্রায় শেষ। ঝড় থেমে গেছে। সুরেলা কোন কথা না বলে বাড়িতে চলে গেল। আর আমি আমার ঘরে চলে এলাম। সুরেলার উপর আমার খুব অভিমান হলো। এই রাত্রে আমার সাথে একটু কথা বললে কি বা ক্ষতি হতো তার। আর বলবেই বা কেন! আমি তো তাকে……………..কথাটা ভাবতেই রাহাতের নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। পরক্ষণেই রাহাতের মনে হলো, তার এই তুচ্ছ জীবনে আজকের এই রাত্রির চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে! সে চায় সুরেলা তার স্বামী সংসার নিয়ে ভালো থাকুক।
Discussion about this post